এবার নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলন দেখল নিউজিল্যান্ড। দেশটির কৃষকরা সরকারের নতুন করারোপের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ট্র্যাক্টর ও পিকআপ ট্রাকের কনভয় নিয়ে বিভিন্ন শহর প্রদক্ষিণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ওয়েলিংটন, অকল্যান্ড, ক্রাইস্টচার্চ ও অন্যান্য শহরে প্রদক্ষিণ করা এই কনভয় সেখানকার ট্রাফিকেও বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।
বিক্ষুব্ধ কৃষকরা বাম ঘেঁষা সরকারের তথাকথিত বায়ু নির্গমন ট্যাক্স থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন গত সপ্তাহে কৃষি ও বায়োজেনিক মিথেনের ওপর প্রথম দেশ হিসেবে শুল্কের পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৬০ লাখ গরু ও ২ কোটি ৬০ লাখ ভেড়া থেকে মিথেন নির্গত হয়।
আর্ডার্নের যুক্তি হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য ট্যাক্সের প্রয়োজন এমনকি কৃষকরা উপকৃত হতে পারে যদি তারা আরও জলবায়ুবান্ধব মাংসের জন্য উচ্চমূল্য নির্ধারণ করতে পারে।
তবে নিউজিল্যান্ডের হাজার হাজার কৃষক বৃহস্পতিবার এক প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন। যেখানে তাদের স্লোগান ছিল, ‘আমরা (বায়ু নির্গমন ট্যাক্স) এটা নিতে যাচ্ছি না।’
প্রতিবাদের আয়োজনকারী গ্রাউন্ডসওয়েল নিউজিল্যান্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রাইস ম্যাকেঞ্জি বলেন, কর স্থানীয় কৃষকদের কার্যকারিতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের ওপর শাস্তিমূলক ও প্রতিকূল নির্গমন করের জন্য সরকারের আদর্শিক প্রতিশ্রুতি, গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।’
সরকার আশা করছে, নতুন করারোপ বাস্তবায়ন হলে গবাদি পশু থেকে মিথেন নির্গমনের হার ২০ শতাংশ কমবে।
কিন্তু ম্যাকেঞ্জির যুক্তি, এর ফলে কৃষি খাতে বিনিয়োগকারীরা কম পারিশ্রমিক দিয়ে কম দক্ষ বিদেশি কৃষকদের রাখার চেষ্টা করবেন।
স্থানীয় কৃষক মার্ক চ্যান্ডলার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী রেডিও নিউজিল্যান্ডকে (আরএনজেড) বলেছেন যে প্রস্তাবিত পশুসম্পদ নির্গমন শুল্কের সঙ্গে সম্পর্কিত করারোপের সিদ্ধান্ত শাস্তিমূলক।
তিনি বলেন, ‘এখানে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা জীবনকে অসম্ভব করে তুলছে।’
গবাদি পশু পালনের কারণে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মিথেন। তবে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নে এর বিরাট প্রভাব রয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হওয়ার পরও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ৩০ শতাংশের দায় মিথেনের।
বৃহস্পতিবার ওয়েলিংটনে স্থানীয়রা পাল্টা প্রতিবাদের আয়োজন করে। প্রস্তাবিত করারোপের পক্ষে থাকা মানুষের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৃষি খাতকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিবেশবিদ ভ্যালেরি মোর্সের মতে, মানুষ ধ্বংসাত্মক ও দূষণকারী কৃষি পদ্ধতিতে ভর্তুকি দিতে দিতে ক্লান্ত এবং কৃষকদের টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি অবলম্বন করে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানের অংশ হতে হবে।
মোর্সের মতে, নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে কৃষকদের মানিয়ে নিতে হবে।
তারানাকি-এর জলবায়ুসংক্রান্ত বিচারক এমিলি বেইলি বলেন, এই বছর শুধু বন্যা, তীব্র ঝড় ও খরার কারণে এই দেশের গ্রামীণ ও কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি শুধু খারাপ হচ্ছে।
কৃষকরা হয় খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং দ্রুত তাদের নির্গমন কমিয়ে আনতে পারে বা তারা ও অন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।