ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর চলমান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি বিশৃঙ্খলা উসকে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
ইব্রাহিম রাইসি বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মন্তব্য- যিনি বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও অন্য দেশের ধ্বংসের উসকানি দিচ্ছেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির চিরন্তন বাণী, যিনি আমেরিকাকে বড় শয়তান হিসেবে বলেছিলেন।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে রাইসি বলেছেন, ‘জনগণের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে শত্রুর চক্রান্ত মোকাবিলা করতে হবে।’
রাইসি আমেরিকাকে অতীতে অস্থিরতা শুরু করার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছেন, ‘সামরিক উপায়ে ও নিষেধাজ্ঞায় আমেরিকার ব্যর্থতার কারণে ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা অস্থিতিশীল (ইরানকে) করার ব্যর্থ নীতি অবলম্বন করেছে।’
ইরানে বিক্ষোভে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে
চলতি মাসেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আমেরিকা ও ইসরায়েলকে চলমান বিক্ষোভের জন্য দায়ী করেছেন।
খামেনি অভিযোগ করে বলেছেন, তারা (আমেরিকা ও ইসরায়েল) ইরানের অগ্রগতি রোধ করার চেষ্টা করছে।
বাইডেনকে ইঙ্গিত করে ইরানের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র নাসের কানানি রোববার বলেছেন, ‘পুরো বছরের ব্যর্থতায় ক্লান্ত একজন রাজনীতিকের (জো বাইডেন) হস্তক্ষেপের বিপরীতে ইরান খুবই শক্তিশালী।’
ইনস্টাগ্রামে কানানি লিখেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে ইরানের স্বাধীনতা রক্ষা করব।’
নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘন করায় ও ঠিকভাবে হিজাব না পরায় মাহসা আমিনিকে আটক করে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে পুরো ইরানে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভে এরই মধ্যে শাসকগোষ্ঠীর অপসারণের দাবি উঠেছে।
বিক্ষোভে ২ শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। এর বেশির ভাগই বিক্ষোভকারী। যাদের অনেকেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে পিটিয়ে বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিক্ষোভকারীর লাশ হস্তান্তরে টালবাহানার অভিযোগ রয়েছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের শ্লীলতাহানিকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
ইরানে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন জো বাইডেন
এদিকে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইরানের নাগরিকদের, সাহসী নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
‘ইরানে যা জেগে উঠেছে তা আমাকে স্তম্ভিত করেছে। এটি এমন কিছু জাগ্রত করেছে, যা আমি মনে করি না দীর্ঘ সময়ের জন্য শান্ত হবে।’
এদিকে এই বিক্ষোভ সহিংস উপায়ে দমনের চেষ্টা করায় ৬ অক্টোবর ইরানি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ গত মাসেও নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।