নিউজিল্যান্ডের প্রতি চারটি মাছের মধ্যে তিনটির ভেতরে অতিমাত্রায় প্লাস্টিকের কণা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) পাওয়া গেছে। এতে করে দেশীয় সামুদ্রিক পাখির বিশাল অংশ এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় প্রজাতির জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে মহাসাগর।
দেশটির সাগর-মহাসাগরের সবশেষ অবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে।
সরকারি গবেষণার বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগরে ফেলে দেয়া খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, ব্যবহৃত কাপড়, মাছ ধরার পুরোনো জালসহ বিভিন্ন উপকরণ মাছের পেটে চলে যাচ্ছে।
এমন প্লাস্টিকের কণা মাছের জন্য যেমন ক্ষতিকর তার চেয়ে বেশি মানুষের জন্যে।
সার্ডিন, শেলফিশসহ যেসব মাছ আস্ত খাওয়া হয় সেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিক প্রাণী ও পরিবেশবিষয়ক প্রতিবেদনে এমনসব ভয়াবহ হুমকির চিত্র উঠে এসেছে। চালের চেয়েও ছোট এমন সব প্লাস্টিক কণার ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মহাসাগরে বাস্তুসংস্থান চরম হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ দেশীয় সামুদ্রিক পাখি, ৮২ শতাংশ সৈকতের পাখি, ৮১ শতাংশ সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং ২২ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
এমন ভয়াবহ চিত্র উল্লেখ করে পরিবেশমন্ত্রী ডেভিড পার্কার বলেন, ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।’
পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায়ই ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিকের দূষণ। সুউচ্চ পর্বতমালা থেকে গভীর সমুদ্র- এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পৌঁছেনি প্লাস্টিক দূষণ।
চলতি বছর ২৩ মার্চ মানবদেহের রক্তে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পান গবেষকরা। গবেষণায় অংশ ব্যক্তিদের প্রায় ৮০ শতাংশের রক্তে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিকের দূষণ। সুউচ্চ পর্বতমালা থেকে গভীর সমুদ্র- এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে প্লাস্টিকের দূষণ পৌঁছেনি।
প্রতিদিন গ্রহণ করা খাবার, পানি ও বাতাসের মধ্য দিয়ে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা আমাদের শরীরেও প্রবেশ করছে।
আদি ও তুলনামূলক অক্ষত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত অ্যান্টার্কটিকায়ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গত ৯ জুন প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকার তুষারে প্রথমবারের মতো চালের চেয়েও ছোট প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল দ্য ক্রিয়োস্ফেয়ারে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, যার মধ্য দিয়ে অ্যান্টার্কটিকার জন্য মারাত্মক হুমকির বিষয়টি সামনে আসে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর উপস্থিতি বিভিন্ন জীবের বৃদ্ধি, পুনরুৎপাদন, স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।
মানবজাতির ওপরও মাইক্রোপ্লাস্টিকের নানা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বাতাসে এর উপস্থিতি তুষারখণ্ড গলে যাওয়া ত্বরান্বিত করতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক কোথায় নেই? বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকার বরফ থেকে শুরু করে সাগরের গভীর তলদেশ সর্বত্রই মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
প্লাস্টিকের বাটিতে খাবার খাওয়ার কারণে মানুষের মলেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব এলাকায় বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে গড়ে এক বছর বয়সী ছয়টি শিশুর মলে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির চেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
গবেষণা অনুসন্ধানে বলা হয়, প্লাস্টিকের তৈরি চুষনি চোষা ও পাত্রে খাদ্যগ্রহণ, প্লাস্টিকের খেলনা মুখে দেয়ায় প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশুরা প্লাস্টিকের সান্নিধ্যে বেশি আসে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়।