বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কিতাবের শেষ জামানার যুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করলেন বাইডেন

  •    
  • ৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৩:৪৮

১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে আরমাগেডনের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ব। এরপরে ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আর কৌশলগত চিন্তার অংশ ছিল না। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টই বলছেন, শেষ জামানার যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব।

ইউক্রেনে পিছিয়ে পড়ছে রুশসেনারা। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধে জেতার জন্য রাশিয়া যদি কৌশলগত পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে তবে বিশ্ব ‘আরমাগেডন’-এর মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বাইবেলের নিউটেস্টামেন্টে বর্ণিত, আরমাগেডন হলো সেই স্থান যেখানে বিশ্ব ধ্বংসের আগে ভালো ও খারাপের শেষ যুদ্ধ হবে।

নিউ ইয়র্কে ডেমোক্র্যাটিক তহবিল সংগ্রহকারীদের অনুষ্ঠানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির বিষয়ে বলেন, ‘আমরা কেনেডি এবং কিউবার সংকটের পর আরমাগেডনের মুখোমুখি হইনি।’

(১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর পর এসে আবারও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পারমাণবিক সংঘাতের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে আসছে।)

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দিকে ইঙ্গিত করে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন একজন লোক আছে যাকে আমি মোটামোটি ভালোভাবে চিনি।

‘যখন তিনি (ভ্লাদিমির পুতিন) কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা জৈবিক অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা বলেন, তখন তিনি রসিকতা করেন না কারণ তার সামরিক বাহিনী, আপনি বলতে পারেন, উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল।’

যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পারমাণবিক হামলা চালালে নিজেকে আর রক্ষা করতে পারবেন না পুতিন। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে পারমাণবিক হামলা হলে বিশ্ব কখনোই রাশিয়াকে ক্ষমা করবে না।

সিক্সটি মিনিটসের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক স্কট পেলির সঙ্গে জো বাইডেন

এর আগে গতমাসে সানডেস সিক্সটি মিনিটের প্রোগ্রামের প্রিভিউতে দেখা যায়, উপস্থাপক স্কট পেলি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যদি রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করে তবে রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে বাইডেনের বার্তা কী হবে।

জবাবে বাইডেন বলেন, ‘করবেন না (পারমাণবিক বোমা ব্যবহার)। করবেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আপনি যুদ্ধের চেহারা (পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করলে) পরিবর্তন করবেন।’

তবে রাশিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, সে ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন বাইডেন।

কিন্তু আমেরিকা যে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিশ্চিত করে সে সময় বাইডেন বলেছিলেন, ‘এবং তারা কী করবে, তার ওপর নির্ভর করবে, কী প্রতিক্রিয়া ঘটবে।’

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভ্লাদিমির পুতিনকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পারমাণবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে 'পরিণাম' ভোগ করবে।

এদিকে রাশিয়া বারবার বলে এসেছে, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি হলো রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকিতে পড়লেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে দেশটি।

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ৪টি অঞ্চলকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। ইউক্রেনও অঞ্চলগুলো উদ্ধারে মরিয়া। সেক্ষেত্রে এই ৪ অঞ্চলে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান, রাশিয়ার ভেতরের হামলা হিসেবে বিবেচনা করতে পারে ক্রেমলিন।

ইউক্রেন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধ কতটা বাস্তব?

ইউক্রেনে রুশ বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে, এমন দাবি পশ্চিমাদের। এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোভুক্ত দেশ ট্যাংকের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করছে।

যদিও সরাসরি ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ায়নি, এরপরও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না রাশিয়া। এমন অবস্থায় যে কৌশলগত পরমাণু বোমা ব্যবহারকে একসময় অসম্ভব ভাবা হতো, তার সম্ভাবনা এখন বাড়ছে।

এবং তারা কী করবে, তার ওপর নির্ভর করবে, কী প্রতিক্রিয়া ঘটবে।

রাশিয়ার কৌশলগত পরমাণু বাহিনী

১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আর কৌশলগত চিন্তার অংশ নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে।

রাশিয়ার পারমাণবিক হামলায় পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া কী হবে?

রাশিয়া যদি ইউক্রেনে সীমিত পরিসরেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে, তাতে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? তা বলা মুশকিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া যদি পারমাণবিক, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালায়, যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ওয়ারশোতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ওয়ারশো মেমোরেন্ডাম নামে পরিচিত।

যখন তিনি (ভ্লাদিমির পুতিন) কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বা জৈবিক অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা বলেন, তখন তিনি রসিকতা করেন না কারণ তার সামরিক বাহিনী, আপনি বলতে পারেন, উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল।

যদিও সেই চুক্তি পশ্চিমারাই লঙ্ঘন করেছে ও পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ব্লকের অনেকেই এখন ন্যাটো সদস্য। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে প্রাথমিক বিরোধও ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়েই।

এখন প্রশ্ন হলো ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পুতিন কী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসবেন?

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র আসলে কী

পারমাণবিক বোমা প্রকৃত অর্থে একটি ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক কমান্ডারদের সুবিধা দিতে আরও নমনীয়, অপেক্ষাকৃত ছোট থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা তৈরি ও পরীক্ষা শুরু হয় ১৯৫০-এর মাঝামাঝি সময় থেকে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে পরমাণু ওয়ারহেডগুলো আরও আধুনিক হয়েছে। যেখানে একজন অপারেটর একটি পারমাণবিক বোমার ধ্বংস ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবে। যেখানে একটি কৌশলগত পারমাণবিক বোমা ১ কিলোটনের ভগ্নাংশ থেকে ৫০ কিলোটন পর্যন্ত হতে পারে। এক কিলোটনের বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১ হাজার টন টিএনটির সমান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় বিস্ফোরিত ‘লিটল বয়’ পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন।

কৌশলগত পারমাণবিক বোমাবিরোধী সৈন্যের সংখ্যা, জাহাজ, মার্শালিং ইয়ার্ড, বিমান ঘাঁটির আকারের ওপর নির্ভর করে ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল।

স্নায়ুযুদ্ধের সময়, শুধু চেকোস্লোভাকিয়ার সেনাবাহিনী প্রাথমিক আক্রমণের অংশ হিসেবে ন্যাটো লক্ষ্যবস্তুতে ১৩১টি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রেখেছিল।

ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোরও পারমাণবিক হামলার জবাব দেয়ার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল।

এরপরও যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার মুহূর্তেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার মতো দেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর