ইরানে পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়া কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির দাফনের খবর কাভার করা সাংবাদিক ইলাহে মোহাম্মদিকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার তাকে হেফাজতে নেয়া হয়। মোহাম্মদির আইনজীবী মোহাম্মদ আলী কামফিরুজি টুইটে এসব নিশ্চিত করেছেন।
তিনি লেখেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এলাহে মোহাম্মদিকে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে। মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি। পুলিশ হেফাজতে মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, এরপর কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান মাহসা আমিনি
নিজের জন্মশহর কুর্দিস্তান প্রদেশের সাকেজে ১৮ সেপ্টেম্বর মাহসার জানাজা ও দাফন হয়। ইরানের হাম মিহান পত্রিকার হয়ে মোহাম্মদি পুরো আয়োজন কাভার করেন।
ইরানে চলমান বিক্ষোভের শুরুটা এই সাকেজ শহর থেকেই। মাহসাকে দাফনের পর পর, মাথার স্কার্ফ খুলে ইরান সরকারের আরোপিত পোশাক বিধির বিরুদ্ধে স্লোগান শুরু করে শোকার্তরা।
আইনজীবী কামফিরুজি জানান, মোহাম্মাদির তেহরানের বাড়িতে গত সপ্তাহেই তল্লাশি চালিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী।
আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে মোহাম্মাদির স্বামী টুইটে লেখেন, অল্প সময়ের জন্য ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। জানিয়েছে, তেহরানের এভিন কারাগারে তাকে বন্দী রাখা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে, শার্ঘ ডেইলির সাংবাদিক নিলুফার হামেদিকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। মাহসা কোমায় থাকা অবস্থায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। তার কারণেই পুরো ঘটনা বিশ্বের কাছে প্রকাশ পায়।
মোহাম্মাদি যে কারাগারে আছেন, হামিদিকে সেখানেই আটক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। হামিদির বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ আনেনি ইরানি পুলিশ।
সাংবাদিক নিলুফার হামেদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর আটক করা হয়
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের ধরতে দেশের ভেতর বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে ইরানি পুলিশ। যারা মাহসা ইস্যুতে খবর সংগ্রহ করেছেন, তারা আছেন বেশি আতঙ্কে। এসব খবর যেন না ছড়াতে পারে, সেজন্য ইন্টারনেট পরিষেবা সীমিত করে দিয়েছে ইরান সরকার।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আটক থাকার সময় মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন মাহসা আমিনি। এতেই তার মৃত্যু হয়। যদিও কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করেনি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) বলছে, বিক্ষোভ শুরুর থেকে অন্তত ২৫ সাংবাদিককে আটক করেছে ইরানি পুলিশ।
সিপিজের মধ্যপ্রাচ্যের সমন্বয়ক শেরিফ মানসুর বলেন, ‘ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই তাদের দমনমূলক অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। ইন্টারনেট সেবা চালু করে জনগণের তথ্যের আধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
ইরানি পুলিশের হাতে আটক আছেন আলোচিত ফটোসাংবাদিক ইয়ালদা মোয়াইরি। ২০১৯ সালের ইরানে জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভের একটি আইকনিক ছবির জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মোয়াইরি। তাকে তেহরানের বাইরে কুখ্যাত কার্চাক কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে।
ফটোসাংবাদিক ইয়ালদা মোয়াইরি
সিপিজে বলছে, তেহরানে ১৯ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ কাভার করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বলছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৩৩ সাংবাদিক এখন কারাগারে আছেন।
‘ইরানি সাংবাদিকরা নতুন সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছেন’