ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে উসকানি দেয়ার অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানির মেয়ে ফাইজেহ হাশেমিকে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে আনাদৌলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের উসকে দেয়ার অভিযোগে পূর্ব তেহরান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নিরাপত্তা সংস্থার দাবি, উসকানি দিয়েও তিনি মানুষকে রাস্তায় নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পদে নারী প্রার্থী হিসেবে ৫৯ বছর বয়সী বিশিষ্ট নারী অধিকারকর্মী ফাইজেহ হাশেমির নাম শোনা যাচ্ছে।
বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সংক্রিয় থাকায় তিনি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন।
এর আগে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারবিরোধী প্রচারণারমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ মাস তেহরানের কারাগারে থাকতে হয় তাকে।
২০০৯ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কয়েকবার।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা আলী আকবর রাফসানজানি ইরান বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক। সংস্কারপন্থি এই নেতা এর পরও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তার মৃত্যু হয়। তবে যোগ্যতায় তার মেয়েও কম নন।
সম্প্রতি ইরানে ‘সঠিকভাবে’ হিজাব না করার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল বিক্ষোভ।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। ছবি: এএফপি
রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ৮০টি শহর এখন অগ্নিগর্ভ। পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান বিক্ষোভে সোমবার পর্যন্ত ৭৫ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন, বলে জানিয়েছে ওসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস। এ সময় আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ।
১৯৭৯ সালে দেশটিতে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে নারীর পোশাক ইস্যুতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ এটি।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ওই বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
এর আগে দেশটির ‘নৈতিকতা পুলিশ’ ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
স্থানীয় সময় সোমবার কানাডার অটোয়ায় দেশটি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়া আন্দোলনকারীদের ওপর ইসলামিক রিপাবলিকটির সরকারের নজীরবিহীন দমন-পীড়নের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতা পুলিশ সদস্যরা, প্রজাতন্ত্রের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও সংস্থা এর আওতায় পড়বে।’
একই ইস্যুতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দেশটির বিতর্কিত নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর দায় দেশটির নৈতিকতা পুলিশ ইউনিটের। এই মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভরত নারীদের পুলিশের নির্বিচার দমন-পীড়নের ঘটনায় এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
নারীর জন্য কঠোর পোশাকবিধি দেখভালের দায়িত্বে আছে ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ ইউনিট, ফারসি ভাষায় যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘গাস্ত-ই এরশাদ’। নিবর্তনমূলক ভূমিকার কারণে এই ইউনিট দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত অজনপ্রিয়। মাহসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে ‘নৈতিকতা পুলিশ’-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পাশাপাশি দেশটির শাসকগোষ্ঠীর প্রতিও বিপুলসংখ্যক মানুষের অনাস্থার প্রকাশ ঘটেছে এবার।