রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের গণভোটে রায় এসেছে মস্কোর পক্ষে, তবে এই গণভোটকে জালিয়াতি আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলো।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর এ গণভোটের আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
অঞ্চলগুলোতে দায়িত্ব নেয়া রুশ কর্মকর্তাদের দাবি, গণভোটে অংশগ্রহণকারীদের সবাই এখন এর মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন।
নির্বাচনে প্রায় ৪০ লাখ ভোটারকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে প্রক্রিয়াটি স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থী বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, ৯৯.২৩ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর খেরসনে ৮৭ শতাংশ এবং জাপোরিঝঝিয়ায় ৯৩ শতাংশ ভোট পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেয়ার পক্ষে।
অবশ্য গণভোটে এত বেশি ভোট পড়ার দাবি অনেকটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার রাশিয়ার পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশনে এ অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ করে নেয়ার ঘোষণা দেবেন। এ চারটি অঞ্চল ইউক্রেনের মোট ভূমির প্রায় ১৫ শতাংশ।
আরটির প্রতিবেদন বলছে, এ অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে অঙ্গীভূত করার জন্য রাশিয়ার পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে। এ প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, কাজটি দ্রুতই হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে একই ধরনের একটি গণভোটের মাধ্যমে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করে নেয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া যদি এই চারটি অঞ্চল এবার নিজেদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করে নেয় তবে চলমান যুদ্ধ আরেকটি ভিন্ন এবং বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। কারণ এসব অঞ্চল ফিরে পেতে ইউক্রেন হামলা করলে সেই হামলা হবে রাশিয়ার সার্বভৌম ভূমিতে হামলা।
ইউক্রেনের ভেতরে থাকা এই চারটি অঞ্চল জোর করে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টাকে জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনেস্কি। তিনি বলেন, দখল করা এলাকাগুলোতে এ ধরনের প্রহসনকে গণভোটের নকলও বলা যায় না।
সার্বিক পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পরে গণভোট বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এসব অঞ্চলকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নিলে সেটিকে পাশ্চাত্য কখনোই স্বীকৃতি দেবে না।
তবে পুতিন বলেছেন, এসব অঞ্চলে বসবাসরত জাতিগত রাশিয়ান এবং রাশিয়ান ভাষাভাষী জনগণের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য এই আয়োজন।