বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরানে গুলির মুখেও বিক্ষোভকারীরা অটল, নিহত বেড়ে ৭৬

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৫০

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত ৭৬ জনের মধ্যে অন্তত ছয় নারী ও চার শিশু রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন উপেক্ষা করে সোমবারও তেহরান, ইয়াজদ, কারাজসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান প্রবল বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৬ জন।

বিক্ষোভ দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ব্লকসহ ইন্টারনেটে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে এর পরেও একের পর এক শহরে ছড়িয়ে পড়ছে সহিংস বিক্ষোভ।

অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানোয় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।

রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন হিজাববিরোধীরা

ইরান সরকার দাবি করছে, বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ৪১, তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক জন সদস্যও আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইরানের বিভিন্ন শহরে সোমবার রাতেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

মাহসা আমিনি যে প্রদেশে বসবাস করতেন সেই পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দিস্তানের রাজধানী সান্দাজে নারীরা উল্লাসিত জনতার সামনে মাথার হিজাব খুলে পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ইয়াজদ শহরে কয়েক নারীকে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়েও স্লোগান দিতে দেখা যায়। আইএইচআর-এর প্রকাশিত বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায়, সান্দাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে পুলিশ।

ইয়াজদ শহরে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন নারীরা

বিভিন্ন ভিডিওতে তেহরানেও ব্যাপক জনবিক্ষোভ দেখা গেছে। তারা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।

তাবরিজ শহরের কয়েকটি ভবন থেকে মোবাইল ফোনে তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি, টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করে রাস্তায় প্রতিবাদ করছে মানুষ।

আইএইচআর-এর মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মাহসার মৃত্যুর ঘটনায় চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত ৭৬ জনের মধ্যে অন্তত ছয় নারী ও চার শিশু রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন উপেক্ষা করে সোমবারও তেহরান, ইয়াজদ, কারাজসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে মাজানদারান শহরে। সেখানে নিহতের সংখ্যা ২৫। এরপর পশ্চিম আজারবাইজানে ১১, গিলান শহরে ১০, কেরমানশাহ শহরে ৬, কুর্দিস্তানে ৬, আলবোর্জে ৪ জন এবং তেহরানে ৩ জনের প্রাণ হারানোর তথ্য দিয়েছে আইএইচআর। বাকিরা মারা গেছেন কোহগিলুয়েহ এবং বয়ের আহমদ, ইসফাহান, খোরাসান-রাজাভি, জাঞ্জন, সেমন, কাজভিন, ইলম এবং পূর্ব আজারবাইজানে।

তিন বছরের মধ্যে ইরানের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী সরাসরি গুলি করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট ও চরম লঙ্ঘন।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, গ্রেপ্তারের মোট সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তির ওপর হামলা করছে বলেও দাবি করা হয় রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে।

মাজানদারানের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ করিমি সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-কে বলেন, ‘ইসলামি বিপ্লববিরোধী এজেন্ট দাঙ্গাকারীরা সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছে, তারা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছে।’

বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি এজেই।

মিজান অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তেহরানে পুলিশ সদরদপ্তর পরিদর্শনে গিয়ে বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন গোলামহোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা দিনের ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বপালন করছেন। অনেকে একটু ঘুমানোর সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছেন না।’

মাহসার মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ এরই মধ্যে দেশটির ৮০টির বেশি শহরে ছড়িয়ে গেছে।

পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ অংশগ্রহণকারীদের ‘ইসরায়েলের সেনা’ হিসেবে অবিহিত করছে সরকার ও হিজাবপন্থিরা। এরই মধ্যে তারাও বিক্ষোভ করেছে এবং সেই বিক্ষোভ সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

ইরানের অন্তত ৮০ শহরে ছড়িয়েছে বিক্ষোভ

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।

মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান মাহসা আমিনি

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকার ঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতীত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।

এ বিভাগের আরো খবর