নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি জানাতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুইবারের অস্কার বিজয়ী ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক আসঘার ফারহাদি।
রোববার ইনস্টাগ্রামে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
এই সময় চলমান আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেয়া প্রগতিশীল ও সাহসী নারীদেরও প্রশংসা করেছেন তিনি।
ফারহাদি বলেন, ‘তারা এমন সাধারণ, অথচ মৌলিক অধিকার খুঁজছে যেগুলো রাষ্ট্র তাদের দিতে প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘এই সমাজ, বিশেষ করে নারীরা, এই সময়ে এসে কঠোর ও বেদনাদায়ক পথ অতিক্রম করেছে এবং তারা স্পষ্টভাবেই একটি গন্তব্যে পৌঁছেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছি, তারা ১৭ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী।
দুইবারের অস্কার জয়ী ইরানি পরিচালক আসঘার ফারহাদি
‘তারা যেভাবে রাস্তায় মিছিল করেছে, আমি তাদের মুখে ক্ষোভ ও আশা দেখেছি । সব বর্বরতাকে উপেক্ষা করে তাদের নিজেদের ভাগ্য বেছে নেয়ার অধিকারের দাবিতে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি।’
বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের সব শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক অধিকার কর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি, যারা মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং তারা যাতে ইরানের শক্তিশালী ও সাহসী নারী-পুরুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভিডিও প্রকাশ করে।’
মূলত জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পরিচিতি রয়েছে আসঘার ফারহাদির। ২০১১ সালে ‘এ সেপারেশন’ এবং ২০১৬ সালে ‘দ্য সেলসম্যান’ চলচ্চিত্রের জন্য বিদেশি ভাষা ক্যাটাগরিতে দুইবার অস্কার (অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড) জেতেন তিনি।
আমি তাদের মুখে ক্ষোভ ও আশা দেখেছি । সব বর্বরতাকে উপেক্ষা করে তাদের নিজেদের ভাগ্য বেছে নেয়ার অধিকারের দাবিতে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি।
এদিকে ‘সঠিক নিয়মে’ হিজাব না পরার অভিযোগে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইরান।
তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।
নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে এই বিক্ষোভে নারীদের পাশাপাশি ইরানি পুরুষও যোগ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নারী নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরার ঘোষণা দিয়ে ভিডিও পোস্ট করছেন।
এ সেপারেশন ও দ্য সেলসম্যান চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার পেয়েছিলেন আসঘার ফারহাদি
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল ইরান। ইরানের বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও চলছে।