বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরানের রাস্তায় এবার হিজাবপন্থিরা

  •    
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৪৪

মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদ ও পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভকারীদের ‘ইসরায়েলের সেনা’ হিসেবে অবিহিত করছে হিজাবপন্থিরা। ইসরায়েল নিপাত যাক’, ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘কোরআনের অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত’- স্লোগানে তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর প্রদক্ষিণ করে তাদের মিছিল।

পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। প্রতিবাদের সপ্তম দিনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৫০টি শহর ও গ্রামে। তাদের দমাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে বিক্ষোভ হয়ে উঠেছে সহিংস, বাড়ছে প্রাণহানি।

বল প্রয়োগ করে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে এবার পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে দেশটির সরকার। ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে শুক্রবার বিক্ষোভ করে হিজাবপন্থিরা। মিছিল থেকে তারা ‘দাঙ্গাকারীদের’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহ্বান জানায়।

মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদ ও পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভকারীদের ‘ইসরায়েলের সেনা’ হিসেবে অবিহিত করছে হিজাবপন্থিরা। তাদের বিক্ষোভটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘কোরআনের অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত’- স্লোগানে তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর প্রদক্ষিণ করে সরকারপন্থিদের মিছিল।

মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে ধরা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সঠিকভাবে হিজাব করেননি তিনি।

পুলিশ হেফাজতে মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, একসময় চলে যান কোমায়। হাসপাতালে ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান মাহসা আমিনি

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

এদিকে বিক্ষোভ শুরুর পর শুক্রবার প্রথম সরকারের তরফ থেকে বিক্ষোভকারীদের কঠিন বার্তা দিয়েছে সেনাবাহিনী। বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা শত্রুদের মোকাবিলা করবে।

‘ইসলামি শাসনকে দুর্বল করার এই মরিয়া কর্মকাণ্ড শত্রুদের অশুভ কৌশলের অংশ।’

সামরিক বাহিনী বলছে, অন্যায়ভাবে লাঞ্ছিত মানুষদের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে শত্রুদের চক্রান্তগুলো নস্যাৎ করা হবে।

হিজাববিরোধীদের সতর্ক করেছেন ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী মাহমুদ আলাভি। তিনি বলছেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং বিপ্লবের মহান অর্জনকে ধূলিসাৎ করার স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়িত হবে না।’

২০১৯ সালে গ্যাসোলিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভের পর এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ কর্মসূচি হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্স বলছে, ওই বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ১ হাজার ৫০০ মানুষ।

সাম্প্রতিক অস্থিরতায় রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের পুলিশ স্টেশন এবং যানবাহনে আগুন দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবারই গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৮৮ জন।

রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন হিজাববিরোধীরা

উত্তাল পরিস্থিতিতে ইরানে ইন্টারনেটের গতিও কমিয়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। একটি বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ার কারণে লাখ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

তেহরান ও দক্ষিণ ইরানের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠাতে পারলেও কোনো ছবি পাঠাতে পারছেন না। ইনস্টাগ্রাম পুরোপুরি বন্ধ।

ইন্টারনেট সেবা নিয়ে ইরানি কর্তৃপক্ষের এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটিতে ইন্টারনেটে হস্তক্ষেপ নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ২০১৯ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময়েও প্রায় সপ্তাহখানেক ইন্টারনেট বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

ইরানে ১৯৭৯ সালের ৭ মার্চ নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।

এই পোশাকবিধি অনুযায়ী নারীদের জনসমক্ষে চুল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখতে হয় এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। আর বিষয়টি নিশ্চিতের দায়িত্ব রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিশেষ শাখা- নৈতিকতা পুলিশের ওপর।

এ বিভাগের আরো খবর