বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরানজুড়ে নারীর পোশাকের স্বাধীনতা দাবি, বিক্ষোভে নিহত ৭

  •    
  • ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:০৯

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন। তারা পুলিশের যানবাহনে আগুন দেয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী স্লোগানও দিচ্ছেন। দেশটির রাজধানী তেহরান, মাশহাদ, তাবরিজ, রাশত, ইসফাহান, সিরাজসহ অন্তত ১৫টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার খবরও দিয়েছে আইআরএনএ।

‘সঠিক নিয়মে’ হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে চলমান বিক্ষোভে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। টানা ছয় দিনের বিক্ষোভ রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রতিবাদের ঝড় সামাল দিতে ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেবল মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

নরওয়েভিত্তিক কুর্দি অধিকার গোষ্ঠী হেনগাও বুধবার জানায়, গত কয়েক দিনের সংঘাতে মোট ছয়জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার।

ইরানে পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া মাহসা আমিনি

হেনগাও-এর দাবি অনুযায়ী, পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের পিরানশাহর ও উর্মিয়া শহরে ভয়াবহ সংঘর্ষে মঙ্গলবার ১৬ বছর ও ২৩ বছর বয়সী দুজন মারা যান। এ ছাড়া শনিবার দিভানদারে বিক্ষোভের সময় আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

অন্যদিকে বিক্ষোভ মোকাবিলার সময় পুলিশের চার সদস্য আহত এবং এক পুলিশ সহকারীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে রেডিও ফ্রি ইউরোপ।

ইরান সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত তিন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে।

মাহসা আমিনি যেখানে থাকতেন সেই কুর্দিস্তান প্রদেশের গভর্নর ইসমাইল জারেই কুশা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিক্ষোভের সময় তিনজন নিহত হয়েছেন।‘

চলমান বিক্ষোভ ‘শত্রুদের চক্রান্তের অংশ’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘সন্দেহজনকভাবে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।’

মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে তেহরানে চলছে সহিংস বিক্ষোভ

অধিকারকর্মীরা বলছেন, মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তার মাথায় আঘাত করে, এ কারণেই তিনি কোমায় চলে যান। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ মাহসাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।

এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তেহরানের পুলিশ কমান্ডার হোসেন রাহিমি বলেন, আমিনিকে নৈতিকতা পুলিশ বাধা দিয়েছে, কারণ তার হিজাব অনুপযুক্ত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আমিনিকে পুলিশের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন হোসেন রাহিমি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির নৈতিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্নেল আহমেদ মিরজাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন। তারা পুলিশের যানবাহনে আগুন দেয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী স্লোগানও দিচ্ছেন।

দেশটির রাজধানী তেহরান, মাশহাদ, তাবরিজ, রাশত, ইসফাহান, সিরাজসহ অন্তত ১৫টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার খবরও দিয়েছে আইআরএনএ। টানা বিক্ষোভের পঞ্চম দিন মঙ্গলবার রাতে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তেহরানে বিক্ষোভরত এক নারী নিজের মাথার ঝুঁটি কেটে ফেলছেন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ‘খামিনির মৃত্যু’, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কিছু নারী বিক্ষোভকারীকে হিজাব খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা গেছে। প্রতীকীভাবে নারীদের চুল কেটে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।

Women in #Iran’s city of Sari burn their hijabs (headscarves) as anti-government demonstrations sparked by the death of #MahsaAmini intensify.#Mahsa_Amini https://t.co/LbsGWVypK9 pic.twitter.com/CnIuxBxJIz

— Al Arabiya English (@AlArabiya_Eng) September 21, 2022

অধিকার গ্রুপ আর্টিকেল নাইন্টিন বলেছে, ইরানি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সহিংস পন্থায় বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিবাদ মিছিল ঠেকাতে গোলাবারুদের ব্যবহারে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

মাহসার মৃত্যু এবং বিক্ষোভ দমনে ইরানের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। ইরানের নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।

ইরানের নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকার ঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতীত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।

সে সময় খোলা মাথায় কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ইরানি তরুণী মেলিকা কারাগোজলু। এ কারণে সম্প্রতি কারাগোজলুকে ৩ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ইরানের আদালত। মাহসাকে নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই হিজাব না পরার কারণে মেলিকা কারাগোজলুকে কারাদণ্ড দেয়ার তথ্য জানা গেছে

এ বিভাগের আরো খবর