একাধিক শিক্ষার্থীর গোসলের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার গুজব ওঠার পর তীব্র বিক্ষোভের মুখে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ভারতের পাঞ্জাবের মোহালির চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়।
একই সঙ্গে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ফোন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি ভিডিও। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই ছাত্রী, তার প্রেমিক ও এক বেকারি কর্মীকে।
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোস্টেলের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করেছেন বলে শনিবার রাতে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন তিন ছাত্রী। পরে অভিযুক্ত ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সব কিছুই গুজব। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার পরও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রী নিজেই নিজের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন হিমাচল প্রদেশে তার প্রেমিকের সঙ্গে।
হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রীর ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হয়েছে এবং একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন- এমন খবরে ঘটনার দিন রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রোববার সকালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও সন্ধ্যায় তা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। কালো পোশাকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ক্যাম্পাস। সোমবার সকালেও বিক্ষোভ চলছিল।
এমন প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে আগামী শনিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে হোস্টেলটির তত্ত্বাবধায়ককে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে ঘটনা জানাননি।
মোহালির শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নবরত সিং ভির্ক জানান, অভিযুক্ত ছাত্রীর ফোনে মাত্র চারটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এগুলো তিনি তার প্রেমিককে পাঠিয়েছিলেন। ওই যুবকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় ছাত্রীদের আত্মহত্যার যে গুজব রটেছে তার প্রমাণ মেলেনি জানিয়ে তিনি বলেন, যে ভিডিও ছড়িয়েছে সেটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি, কোনো আপত্তিকর ভিডিও পাইনি।
‘ক্যাম্পাসে কোনো আত্মহত্যার চেষ্টা হয়নি, বরং কিছু ছাত্রী তাদের আপত্তিকর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখন পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’
চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সাতনাম সিং সান্ধু বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। পুলিশের সহায়তায় এটিকে এখন ক্রসচেক করছি।’
পাঞ্জাবের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী গুরমিত সিং মিত হায়ার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘মোহালির ডিসি এবং এসএসপি ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবেন। কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।’
একটি সরকারি বিবৃতিতে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-চ্যান্সেলর ড. আর এস বাওয়া বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো আরেকটি গুজব হচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০টি আপত্তিকর এমএমএস পাওয়া গেছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্তে কোনো শিক্ষার্থীর আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়নি; একটি মেয়ের নিজের ধারণ করা একটি ব্যক্তিগত ভিডিও ছিল, যা সে তার প্রেমিকের সঙ্গে শেয়ার করেছিল।’