ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন একটি চুক্তি বাতিল করেছিলেন, যা ন্যাটো থেকে ইউক্রেনকে দূরে থাকার রাশিয়ার দাবি পূরণ করত।
ক্রেমলিনে নেতৃত্বের কাছাকাছি থাকা তিন ব্যক্তির সূত্রের কথা উল্লেখ করে এমনটিই জানিয়েছে রয়টার্স।
ইউক্রেন-সংক্রান্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান দূত দিমিত্রি কোজাক কিয়েভের সঙ্গে এমন এক অস্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে দূরে রাখার দাবি পূরণ করত। কোজাক পুতিনের কাছে চুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশ নিয়ে গেলেও পুতিন তা নাকচ করেন এবং আক্রমণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দেন।
ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি কোজাক ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি যেই চুক্তিটি করেছিলেন তা রাশিয়ার ইউক্রেনে বড় ধরনের আক্রমণের প্রয়োজনীয়তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
আজ আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি রাশিয়া কখনই শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করতে আগ্রহী ছিল না।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগে পুতিন বারবার জোর দিয়ে বলেছিলেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও এর সামরিক অবকাঠামো পূর্ব ইউরোপ থেকে নতুন সদস্যদের যুক্ত করে রশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসছে এবং জোটটি এখন ইউক্রেনকেও তার বলয়ে নিয়ে আসতে চাইছে।
পুতিন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এমনটা রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি, যা রাশিয়াকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করে।
ক্রেমলিনের ক্ষমতার বলয়ে থাকা ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, কোজাকের চুক্তির বিষয়ে পুতিন মনে করেছিলেন ইউক্রেনের ছাড়গুলো যথেষ্ট নয় এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলের বিষয়েও তিনি আগ্রহী ছিলেন। ফলে চুক্তিটি বাদ দেয়া হয়েছিল।
তবে রয়টার্সের এই অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এটা একেবারেই ভুল তথ্য।’
মন্তব্য করার অনুরোধের কোনো জবাব দেননি কোজাকও।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়া তার আক্রমণের প্রস্তুতির জন্য আলোচনাটিকে একটি স্মোকস্ক্রিন (সময়ক্ষেপণের জন্য) হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
তবে আলোচনার উপাদান সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের জবাব পোডোলিয়াক দেননি বা প্রাথমিক কোনো চুক্তির বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি।
তবে পোডোলিয়াক বলেন, ‘আজ আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি রাশিয়া কখনই শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করতে আগ্রহী ছিল না।’
অন্য একটি সূত্র জানায়, কোজাক পুতিনের কাছে একটি চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর আগেই তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এ ছাড়া পুতিন বারবার পরিকল্পনা পরিবর্তন করছিলেন।
তবে পুতিন কোজাকের প্রস্তাবে রাজি হলেও লড়াই শেষ হবে কি না, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
এদিকে এই চুক্তির বিষয়ে কিয়েভ ও ভলদিমির জেলেনস্কি কতটুকুর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, তা নিরপেক্ষ উৎস থেকে জানতে পারেনি রয়টার্স।
রয়টার্সের সাক্ষাৎকার নেওয়া অন্য একজন ব্যক্তি, যিনি আক্রমণ-পরবর্তী আলোচনায় ছিলেন, তিনি বলেন, মার্চের শুরুতেই আলোচনা ভেঙে পড়ে যখন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে পুতিন বড় আকারের সামরিক অভিযানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এ অভিযানের পর পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এবং রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপ করতে থাকে।