রানি এলিজাবেথের মৃত্যুশোক কাটাতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। কোকেন, গাঁজা এবং কেটামাইনের মতো মাদকে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন তারা। শুধু তা-ই নয়, মাদক কেনার সময় রানির স্মরণে তারা আপনাকে একটি শোকবার্তাও দেবে।
ভাইরাল হওয়া একটি টুইটে সংযুক্ত স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ৯৬ বছর বয়সী রানির মৃত্যুর ১৩ মিনিট পর একটি ই-মেইলে ওষুধ এবং এর মূল্যতালিকা পাঠাচ্ছেন এক ডিলার। সেখানে ১৪ হাজার ৩৬১ টাকায় (১৫০ ইউরো) এক আউন্স গাঁজা অথবা ৩০ গ্রাম কেটামাইন বিক্রি করার কথা বলা হয়।
তারপর ডিলাররা তাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেন, “রানির মৃত্যুতে ডিসকাউন্ট চলছে, বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন।”
howling at this text my plug just sent me... pic.twitter.com/0T8eoUaZWm
— grimace (@siIIymonkey) September 8, 2022অন্য এক ডিলার রানির মৃত্যুর ১ ঘণ্টা পর হোয়াটসঅ্যাপে একই কথা জানান। রানির একটি ছবি পোস্ট করে ওই ডিলার লেখেন, “রানির মৃত্যুর দুঃখজনক সংবাদে আপনি কি বিচলিত বা মন খারাপ করছেন? তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না। আমি রাত ১টা পর্যন্ত আছি।”
ভাইস নিউজের হাতে এমন কিছু বার্তা এসেছে। সেখানে ড্রাগ ডিলাররা বলেছেন, “রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক গ্রাম ‘বলিভিয়ান ফ্লেক’-এর দাম কমিয়ে ৯৬ ইউরো করা হয়েছে। রানির মৃত্যুর বয়সের সঙ্গে মিল রেখে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বার্তাটি পাওয়া এক ব্যক্তি ভাইস নিউজকে বলেন, ‘সাধাণরত এক গ্রাম বলিভিয়ান ফ্লেকের দাম রাখা হয় ১০০ ইউরো। এটা খুবই সততাপূর্ণ দারুণ অফার।’
আসলে অন্য সব ব্যবসায়ীর পাশাপাশি ড্রাগ ডিলাররাও রানির মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছেন। অনুভূতিটা কাস্টমারদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার পাশাপাশি দুঃখ ভুলে যতটা সম্ভব ওষুধ বিক্রি করাই তাদের উদ্দেশ্য।
এমন একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ যাচাই করেছে ভাইস নিউজ। এটি মাদক বিক্রির একটি সংগঠন থেকে পাঠানো; যারা এলএসডি, কোকেন থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদক বিক্রি করে থাকে।
কাস্টমারদের উদ্দেশে তারা লেখে, “ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শাসকের মৃত্যুতে হতবাক এবং দুঃখিত আমরা। জাতীয় শোকের মধ্যে আমরা এখনও একটি সম্পূর্ণ পরিষেবা পরিচালনা করছি।”
এই সংগঠনের এক কাস্টমার ভাইস নিউজকে বলেন, ‘ডিলারের প্রতি আমি বিশেষভাবে মুগ্ধ; তিনি রানির স্মৃতিচারণ করতে এতদূর ভেবেছেন।
‘আসলে পণ্যের গুণমানের কারণে তার কাছে আমাকে যেতে হয় বারবার। তবে এবার তিনি যে সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন, তাতে তিনি আমার কিছুটা আনুগত্যও কিনে নিয়েছেন।’
রানির নাম ব্যবহার করে মাদক বিক্রি এবারই প্রথম না। গত জুনে রানির সিংহাসনে বসার ৭০তম বার্ষিকী ঘিরে জমকালো আয়োজন করে বাকিংহাম প্যালেস, যা ‘কুইনি’স জুবিলি’ নামে পরিচিত।
আয়োজন চলাকালীন এক ডিলার তার গ্রাহকদের জানিয়েছিলেন, “রানির সঙ্গে আগামী চার দিনের পার্টিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইলে আমাকে কল করুন। এটা জুবিলি ডিল।”
পিছিয়ে ছিল না আটলান্টিকের ওপারে নিউ ইয়র্কের মাদক ব্যবসায়ীরা। রানি এলিজাবেথের ছবিসংবলিত ব্যাগে গাঁজা বেচা শুরু করে তারা।
ব্যবসায়ীরা সাধারণত তাদের পণ্যের মার্কিটিংয়ের জন্য বড় ইভেন্টগুলো বেছে নেন। ড্রাগ পলিসি থিংক ট্যাংক ভল্টফেসের পরিচালক পল নর্থ বলেন, ‘ডিলাররা নিয়মিত পণ্যের প্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী ইভেন্টগুলো ব্যবহার করে। অনেকে আবার সরাসরি ফোন করে ‘ডিল’ অফার করে।
‘আসলে মাদক ব্যবসা যে বৈধ- এই অনুভূতি তৈরিতে ব্যবসায়ীরা রানির মৃত্যুকে ব্যবহার করছে। এর ফলে মাদক কেনার পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরও স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কারণ প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া ফিড বা টিভি চ্যানেলে এখন রানির খবর ঘুরপাক খাচ্ছে।’