বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ আসলে কী?

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:০৭

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর ১০ দিন পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত যা যা ঘটবে, সবই ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ নামের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। রানির মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেছেন তার ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস। চার্লস মারা গেলে তার জন্য আনুষ্ঠানিকতারও নাম ঠিক হয়ে আছে, সেটি হলো, ‘অপারেশন মেনাই ব্রিজ’।

ব্রিটেনের সদ্যপ্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বারবার আসছে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’-এর কথা।

রানির মৃত্যুর ১০ দিন পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত যা যা ঘটবে, সবই এই ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়াটি তৈরি হয়েছিল এখন থেকে পাঁচ দশকেরও বেশি আগে ১৯৬০-এর দশকে। অর্থাৎ মৃত্যুর বহু আগে থেকেই রানির জানা ছিল তার প্রয়াণের পরের ১০ দিন কখন কী ঘটবে!

‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ ১৯৬০-এর দশকে প্রণীত হলেও পরে কয়েকবার ঘষামাজা করা হয়েছে, যোগ-বিয়োগ হয়েছে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ২০১৭ সালে প্রথম পরিকল্পনাটির বিস্তারিত প্রকাশ করে। এরপর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় রাজনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম পলিটিকোতে।

তবে রানির মৃত্যুর জায়গাটি কিছুটা গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে। কারণ, ইংল্যান্ডের ভেতর তিনি মারা গেলে পুরো প্রক্রিয়াটি নিখাঁদ ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ হিসেবেই পরিচালিত হতো। তবে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু হয়েছে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল দুর্গে। গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কাটানোর সময় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।

স্কটল্যান্ডে মারা যাওয়ায় ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’-এর প্রথম অংশে যোগ হয়েছে ‘অপারেশন ইউনিকর্ন’।

‘অপারেশন ইউনিকর্ন’ কী

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুপরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোর খুঁটিনাটি বিবরণ রয়েছে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’-এ। আর ‘অপারেশন ইউনিকর্ন’-এর মূল বিষয়টি ইংল্যান্ডের বাইরে স্কটল্যান্ডে রানির মৃত্যু হলে যা করতে হবে সে বিষয়ক। এই পরিকল্পনায় মূলত স্কটল্যান্ড থেকে মরদেহ ইংল্যান্ডে আনার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এরপরের বাকি সব প্রক্রিয়া চলবে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ অনুযায়ী।

ইউনিকর্ন হলো এক শিংয়ের একটি পৌরাণিক ঘোড়া, যেটি স্কটল্যান্ডের জাতীয় প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত।

‘অপারেশন ইউনিকর্ন’ এ রানির মৃত্যুর পর স্কটল্যান্ডে শোকার্তদের সমবেত হওয়ার কিছু জায়গাও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এগুলো হলো হলিরুড প্যালেস, সেন্ট জিলস ক্যাথেড্রাল এবং স্কটিশ পার্লামেন্ট। সেখানে জনসাধারণের জন্য শোক বইও থাকবে।

রানির মৃত্যুর পর অন্তত ছয় দিন স্কটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। রানির মৃত্যুর চতুর্থ দিনে কফিন স্কটল্যান্ডের ওয়েভারলি স্টেশন থেকে রাজকীয় ট্রেনে নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এই কফিন গ্রহণ করবেন।

বাকিংহাম প্যালেসে রানির কফিন পৌঁছানোর পর কার্যকর হবে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’-এর বাকি সব প্রক্রিয়া।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ইংল্যান্ড বা স্কটল্যান্ডের বাইরে অন্য কোনো দেশে মারা গেলে তার মরদেহ ইংল্যান্ডে আনা হতো বিশেষ বিমানে, আর তখন ওই প্রক্রিয়াটির নাম হতো ‘অপারেশন ওভারস্টাডি’

‘রাজকীয় মৃত্যুপরবর্তী’ প্রক্রিয়ার কোডনেম যেভাবে

ব্রিটিশ রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মৃত্যুর পর শেষকৃত্য পর্যন্ত নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। আর সবার ক্ষেত্রেই এই আনুষ্ঠানিকতার আলাদা কোডনেম পূর্বনির্ধারিত। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৫২ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর তথ্য জানাতে ‘হাইড পার্ক কর্নার’ সাংকেতিক বাক্যটি ব্যবহার করা হয়।

এর পর থেকে রাজপরিবারের বিশিষ্ট সদস্যদের মৃত্যুপরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার নাম দেয়ার রীতি চালু হয়। ২০০২ সালের ৩০ মার্চ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা মারা যান। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানিকতার নাম ছিল ‘অপারেশন টে ব্রিজ’, আর ২০২১ সালে প্রিন্স ফিলিপের জন্য পরিচালিত হয় ‘অপারেশন ফোর্থ ব্রিজ’

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেছেন তার ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস। চার্লস মারা গেলে তার জন্য আনুষ্ঠানিকতারও নাম ঠিক হয়ে আছে। আর সেই বাক্যাংশটি হলো, ‘অপারেশন মেনাই ব্রিজ’

‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’

‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ অনুসারে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর দিনটির সাংকেতিক নাম ছিল ‘ডি-ডে’

রানি মারা যাওয়ার পর পরই তার ব্যক্তিগত সচিব বিশেষ টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই যোগাযোগে ব্যক্তিগত সচিব শুরুতেই বলেছেন, ‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’। এর অর্থ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন।

এরপর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের গ্লোবাল রেসপন্স সেন্টার থেকে রানির মৃত্যুর খবর ১৫টি দেশের সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে এই ১৫টি দেশেরও রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন রানি। এ ছাড়া ডি-ডেতে কমনওয়েলথের অন্য ৩৬টি দেশের কাছে রানির প্রয়াণের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

সাধারণ মানুষকে রানির মৃত্যুর তথ্য জানানোর প্রক্রিয়ার উল্লেখও রয়েছে অপারেশন লন্ডন ব্রিজে। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে নিউজফ্ল্যাশ। বিবিসির কর্মী কালো পোশাকে ঘোষণা করেছেন রানির মৃত্যুসংবাদ।

একই সঙ্গে রানির মৃত্যুর ঘোষণাপত্র বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে সাঁটিয়ে দিয়েছেন একজন রাজকর্মী। প্রাসাদের ওয়েবসাইটেও প্রচার হয়েছে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি।

পাঁচ দশকেরও আগে তৈরি পরিকল্পনা অনুযায়ী রানির মৃত্যুর বিষয়ে প্রথম সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এরপর তিনি নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করেন।

রানির মৃত্যুর এক দিন পর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নতুন রাজা। এটাও হয়েছে সেই ১৯৬০-এর দশকে তৈরি করা ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ অনুসারে।

এ বিভাগের আরো খবর