যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও পিছিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চাঁদে অভিযান। দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী রকেট ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’ বা এসএলএস চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কথা ছিল শনিবার সকালে।
রকেটের মূল অংশ থেকে তরল হাইড্রোজেন লিক করে বেরিয়ে আসতে থাকায় উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়েছে। ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে উৎক্ষেপণ স্থগিত করার ঘোষণা আসে আর্টেমিস লঞ্চ কন্ট্রোল থেকে।
আল জাজিরা জানায়, নাসার প্রকৌশলীরা শনিবার সকাল থেকেই এসএলএস উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জ্বালানি ভরা হচ্ছিল রকেটে। কিন্তু স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টার দিকে রকেটে তরল হাইড্রোজেন প্রবাহে সমস্যা ধরা পড়ে। রকেটের ‘কুইক ডিসকানেক্ট’ সিস্টেমের ফাঁক দিয়ে লিক করে বেরিয়ে আসতে থাকে তরল হাইড্রোজেন। পরবর্তী চার ঘণ্টা এই কারিগরি ত্রুটি সমাধানে চেষ্টা চালান নাসার প্রকৌশলীরা। কিন্তু ত্রুটি সারানো সম্ভব না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত উৎক্ষেপণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
নাসা কবে নাগাদ পুনরায় রকেট উৎক্ষেপণের চেষ্টা করতে পারে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কথা বলা হয়নি। ব্যাপক মাত্রায় জ্বালানি লিক মেরামতের জন্য রকেটটিকে প্যাড থেকে সরিয়ে হ্যাঙ্গারে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি ফ্লাইটটি অক্টোবর নাগাদ গড়াতে পারে।
এর আগে প্রথম দফায় ২৯ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে এসএলএস উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে রকেটের চারটি ইঞ্জিনের একটিতে সমস্যা দেখা দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। সে সময় জানানো হয়েছিল, ২ অথবা ৫ সেপ্টেম্বর রকেটটি উৎক্ষেপণ করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে পৌঁছে রকেটটি একটি টেস্ট ক্যাপসুল বিযুক্ত করবে। সে অনুযায়ী, স্পেস লঞ্চ সিস্টেমে স্থাপন করা হয় ক্যাপসুল-ওরিয়ন। জ্বালানিসহ অন্যান্য নির্ধারিত কাজও শেষ হয়েছিল। বিপত্তি বাধে উৎক্ষেপণের কিছু আগে।
নাসা জানায়, রকেটের যে অংশ তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই গণ্ডগোল ধরা পড়ে। এতে উৎক্ষেপণের ৪০ মিনিট আগে বন্ধ করে দেয়া হয় কাউন্টডাউন। জানানো হয়, ত্রুটি দূর না হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে উৎক্ষেপণ।
নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মহাকাশ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চালাতে আর্টেমিস-ওয়ান সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি ক্রুসহ আর্টেমিস-টু পাঠানোর আগে পর্যাপ্ত তথ্য দেবে এটি। এ ছাড়া চাঁদে মানুষের অবস্থানের ক্ষমতা সম্প্রসারণেও আর্টেমিস-ওয়ান সহায়তা করবে।’
১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ দিয়ে শুরু হওয়া পাঁচটি মিশনে মোট ১০ জন নভোচারী চাঁদের বুকে হেঁটেছেন।
আগের চন্দ্রাভিযানের নামকরণ হয়েছিল গ্রিক চন্দ্রদেবতা অ্যাপোলোর নামে। এবারের মিশনের পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষে চাঁদে প্রথম নারীকে পাঠানোর পরিকল্পনা করার হয়েছে৷ এ জন্য অ্যাপোলোরই যমজ বোন আর্টেমিসের নামে নামকরণ করা হয়েছে মিশনের।
মিশন আর্টেমিসের এটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। তাই এতে কোনো মানুষ থাকছে না। সফল হলে পরবর্তী উৎক্ষেপণে রকেটের ক্যাপসুলে থাকবেন মহাকাশচারী।