এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ। মাত্র ৯ সেকেন্ডে চোখের পলকে ধসে পড়বে ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়দায় অবস্থিত ‘টুইন টাওয়ার’।
কুতব মিনারের থেকেও উঁচু এই বহুতল ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া নিয়ে গত কদিন ধরেই চলছিল আয়োজন। সে অনুযায়ী রোববার বেলা আড়াইটায় ভেঙে ফেলা হবে এই জোড়া ভবন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, সকাল থেকে এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ভবনের ভেতরে যাতে কেউ না থাকে তা-ও পরীক্ষা করা হয়েছে। বন্ধ হয়েছে সব ধরনের সংযোগ।
ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। টুইন টাওয়ারসংলগ্ন বাসিন্দাদের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাড়ির ছাদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কাছাকাছি থেকে নয়, বরং টেলিভিশনে ভবন ভাঙার দৃশ্য দেখতে আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা থেকেই নয়দার সেক্টর ৯৩-এ নম্বরে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারতীয় এই টুইন টাওয়ার ধ্বংস করতে ৯ হাজারের বেশি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে ৩৭০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক। ১০০ মিটারের সুপারটেক টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়তে চলেছে তাসের ঘরের মতো।
বহুতল এই ভবন ভাঙতে আইনি লড়াই চলে এক দশকের বেশি সময় ধরে। ২০০০ সালের মাঝামাঝি চালু হয় নয়দাভিত্তিক সংস্থা সুপারটেক লিমিটেড এমারল্ড কোর্ট নামে আবাসন প্রকল্প।
প্রকল্প শুরুর সময় ১৪টি নয়তলা বহুতল থাকার কথা ছিল। তবে ২০১২ সালের দিকে তা পরিবর্তিত হয়ে যায় ১১ তলার ১৫টি এবং ৪০ তলার দুটি কমপ্লেক্স। যেখানে সবুজ এলাকা থাকার কথা সেই জায়গায় কারসাজির বিষয়টি সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। যেখানে সিয়ান ও অ্যাপেক্সের উচ্চতা ২৪ তলা হওয়ার কথা, সেখানে তা ৪০ তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
২০১২ সালে বাসিন্দারা সিয়ান ও অ্যাপেক্স নিয়ে শোরগোল শুরু করেন। তারা অভিযোগ করেন টুইট টাওয়ার বেআইনিভাবে তৈরি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নির্মাণকারী সংস্থা সুপারটেক মিথ্যা বলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ২০১২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে করা আবেদনে বাসিন্দারা টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার জন্য আবেদন করেন। হাইকোর্ট ২০১৪ সালে টুইন টাওয়ার ভাঙার নির্দেশ দেয়।
সুপারটেক রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে। দাবি করা হয়, নয়দা টুইন টাওয়ার নির্ধারিত আইন মেনে হয়েছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের এ নিয়ে কোনো আপত্তির কারণ থাকতে পারে না।
তবে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, টুইন টাওয়ার নির্মাণে একের পর এক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট বাসিন্দাদের পক্ষে রায় দেয়। টুইন টাওয়ারকে বেআইনি বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপারটেক টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলতে অর্থ জোগার করতে সুপারটেককে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি টুইন টাওয়ারে যারা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাদের সুদসহ অর্থ ফেরত দিতেও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপারটেকের পক্ষ থেকে পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পর্যালোচনার জন্য আবেদন করা হয়। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণে আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এত কিছুর মধ্যেও সুপ্রিম কোর্ট তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে।
এরপরই টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দায়িত্ব দেয়া হয় মুম্বাইভিত্তিক সংস্থা এডিফিস ইঞ্জিনিয়ারিংকে। এই সংস্থা এর আগে কেরালার কোচির কাছে চারটি বড় অবৈধ ভবন ভেঙেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইমপ্লোশান নামের কৌশল ব্যবহার করে ভবনের কাঠামোর মধ্যে ড্রিল করে গর্ত করে তার মধ্যে বিস্ফোরক বোঝাই করে দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরণ মাটির ওপর ঘটানো হলেও প্রতিটি ফ্লোর ভেঙে পড়বে। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় যাতে ধুলো বাইরের দিকে উড়ে না যায়, তার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
টুইন টাওয়ার ধ্বংসকে স্থানীয়রা স্বাগত জানালেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলেছেন, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কোনো দরকার ছিল না। বিল্ডারকে শাস্তি দিতে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা যেত। কিংবা টুইন টাওয়ারের দখল নিয়ে সরকার তা সামাজিক কাজে লাগাতে পারত। সেখানে দরিদ্রদের জন্য আবাসন করা যেত।