আমেরিকা রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পর্যবেক্ষণের অজুহাতে সব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে তুরস্ক ও তুরস্কের ব্যবসায়ীদের হুমকি দিতে শুরু করেছে।
তুরস্কের পত্রিকা ইয়েনি সাফাকের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকেই পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে রাশিয়ার ওপর। এমনকি বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে রুশদের সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে। রুশ মালিকানাধীন অনেক ইয়ট পর্যন্ত নিলামে তোলা হচ্ছে। বৈশ্বিক ব্যাংকিং সিস্টেম সুইফট থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে রাশিয়াকে। কিন্তু ন্যাটোভুক্ত দেশ হয়েও এসব কিছুই মানছে না তুরস্ক। তাদের ব্যবসায়ীরা ঠিকই রুশদের সঙ্গে ব্যবসা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে জানা গেছে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) তুরস্ক প্রধান দেশটির গৃহায়ণ খাতের ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ জানার চেষ্টা করেছিলেন।
তুর্কি ব্যবসায়ীদের কাছে সেই কর্মকর্তার প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি রুশদের কাছে কতটি বাড়ি বিক্রি করেছেন এবং কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করেছেন? আপনার বিক্রি করা বাড়ির দাম আপনি কোন মুদ্রায় সংগ্রহ করেছেন? তারা কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে? আপনি হাতে টাকা নিয়েছেন না তারা ব্যাংকে টাকা দিয়েছে।’
এ ছাড়াও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গৃহায়ণ খাতের কর্মকর্তাদের ডেকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন এই সিআইএ কর্মকর্তা।
তবে এতেই শেষ নয়। ইয়েনি সাফাকের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তুরস্কের শিল্প ও ব্যবসা সমিতিকে (টিইউএসআইএডি) হুমকিমূলক চিঠি পাঠিয়ে সীমা লঙ্ঘন করেছে আমেরিকার ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি অ্যাডিয়েমো।
আমেরিকার ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি অ্যাডিয়েমো
আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ থেকে ২২ আগস্ট পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, যেসব টিইউএসআইএডি সদস্য রুশদের সঙ্গে ব্যবসা করবে, তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে।
এরই মধ্যে রুশদের সঙ্গে ব্যবসা করার ইস্যুতে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করে ফেলেছে টিইউএসআইএডি।
তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ। সেই হিসেবে সিআইএ ও ইউএস ট্রেজারি বিভাগের পক্ষ থেকে এমন হুমকি নজিরবিহীন।
তবে তুরস্ক বলছে, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশের সঙ্গে আংকারার গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
তুরস্কের অর্থ উপমন্ত্রী ইউনুস এলিটাস বলেছেন, তিনি আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে তুরস্ক ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য চালিয়ে যাবে এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তুরস্কের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তবে পশ্চিমা মিত্র তুরস্ক এ ক্ষেত্রে একা নয়। আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্র ভারতও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে আগ্রহী। এরই মধ্যে স্বল্পমূল্যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনছে ভারত।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করতে পশ্চিমারা অন্যান্য দেশকে হুমকি দিলেও রুশ জ্বালানি পেতে মরিয়া খোদ পশ্চিমারাই। জার্মানি অভিযোগ করে বলেছে, রাজনৈতিক কারণে গ্যাস দিচ্ছে না রাশিয়া। এমনকি অস্ট্রিয়া পর্যন্ত জ্বালানির দাম রুবলে পরিশোধ করতে রাজি। এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করতে বাধা দেয়া কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।