বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ সাউথ কোরিয়ায় আরও কমেছে জন্মহার।
দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার প্রকাশ করা এক ডেটায় দেখা গেছে, সাউথ কোরিয়ার জন্মহার প্রত্যেক নারীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৮১; যেখানে গত বছরও এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৮৪।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রত্যেক নারীতে দেশটির জন্মহার ১-এর নিচে নেমে আসে।
উন্নত বিশ্বের প্রত্যেক নারীতে জন্মহার সাউথ কোরিয়ার থেকে অনেক বেশি। এই হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
এখন অভিবাসী ছাড়া যদি দেশটি তার জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে চায়, তবে প্রত্যেক দম্পতিকে দুটি করে সন্তান নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন।
২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো জন্মহারের থেকে মৃত্যুহার বেশি ছিল। সে সময়ই দেশটির কর্তৃপক্ষ শঙ্কিত হয়ে পড়ে।
দেশটির রাজনীতিবিদরা বছরের পর বছর ধরেই জানতেন এমন পরিস্থিতি আসছে, কিন্তু তারা এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছুই করতে পারেননি।
সাম্প্রতিক সময়ে সন্তান ধারণের জন্য সাধারণ কোরীয়দের বোঝাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ; কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, এতে কাজ হয়নি।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, কমতে থাকা জনসংখ্যা সাউথ কোরিয়ার জন্য ব্যাপক চাপের সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে দেশটিতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি, জনসংখ্যা অনুপাতে পেনশনের চাহিদা বৃদ্ধি ছাড়াও যুব জনসংখ্যার ঘাটতির ফলে শ্রমিকের সংকটও দেখা দিতে পারে, যা দেশটির অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
একটা সংকট তৈরি হচ্ছে। যদি সাউথ কোরিয়ার জনসংখ্যা ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে, তবে এর অর্থনীতি বৃদ্ধি করতে, এর বার্ধক্য জনসংখ্যার দেখাশোনা করতে এবং সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত লোক থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, অর্থনৈতিক চাপ, বাড়ির দাম বৃদ্ধির ফলে সাউথ কোরীয় নারীরা সন্তান নিতে চাইছে না।
অর্থসম্পদ অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর। দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুদের লালন-পালন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ছাড়া অনেক তরুণ আবাসন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সন্তানের বাবা-মা হওয়া তাদের জন্য অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো।
এদিকে সাউথ কোরিয়ার নারীরা উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তারা পুরুষের সমান নয়। এমনকি পুরুষের সমান বেতনও তারা পাননা। যেকোনো ধনী দেশের তুলনায় দেশটিতে পুরুষ ও নারীর বেতনের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি।
সাউথ কোরিয়ার বেশির ভাগ গৃহস্থালির কাজ এবং শিশু যত্ন এখনও নারীদের হাতে। শিশুদের জন্মের পর তাদের দেখাশোনা করতে মায়েদের বাইরে কাজ বন্ধ করে দেয়া কিংবা চাকরি ছেড়ে দেয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।
সাউথ কোরিয়ার অধিকাংশ নারীকেই পেশাগত জীবন কিংবা স্বামী-সন্তান-পরিবারের যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। অনেক নারীই পরিবার গঠনের জন্য ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিতে চান না। এটি জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
অথচ সত্তরের দশকেও এমনটা ছিল না। সে সময় গড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের চারটি করে সন্তান থাকত। অথচ পরিস্থিতির এই আমূল পরিবর্তনে চিন্তায় পড়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে সহসা এ পথ থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা নেই।