বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউরোপ যেন এক ‘কারবালা’

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ২০:১২

ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী লোয়ার এখন হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে। পণ্য পরিবহনের অনুপযোগী হয়ে গেছে জার্মানির রাইন নদী। ইতালির সবচেয়ে বড় নদী পো’র পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ মিটার নিচে। খরায় হুমকিতে পড়েছে ফসল উৎপাদন। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে দানিউব নদীতে খনন চালাচ্ছে সার্বিয়া, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া।

তীব্র খরার মুখে দিশেহারা ইউরোপ। পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণ ইউরোপে গত দুই মাসে বৃষ্টির পরিমাণ নগণ্য, খুব শিগগির এ অবস্থা পরিবর্তনের আভাস নেই।

রেকর্ডভাঙা উষ্ণতায় ইতোমধ্যে মহাদেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নদী শুকিয়ে গেছে। দ্রুত পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদীর তলদেশ থেকে জেগে উঠছে অতীতে ডুবে যাওয়া নৌযান, পলিতে ঢাকা বসতি।

৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর অবরোধের মুখে পড়েছিল হোসাইন ইবন আলীর কাফেলা। ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাত নদীমুখে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। এতে এতে মরুর বুকে পানির তীব্র অভাবে কাতর হয়ে পড়ে ইমাম হোসাইনের কাফেলা। একপর্যায়ে নিহত হন হোসাইন ইবন আলী। কারবালার সেই করুণ কাহিনী এখনও কোটি মানুষের চোখে পানির ধারা বইয়ে দেয়।

তীব্র খরা অনেকটা সে রকম পানির হাহাকাকার তৈরি করেছে ইউরোপে। বিজ্ঞানীরা সর্তক করে বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ৫০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপবাসী।

জার্মানির অর্থনীতিতে রাইন নদীর গুরুত্ব অনেক। পণ্য পরিবহন, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, খাবার পানিসহ নানা কাজে ব্যবহার হয় এ নদীর পানি। দেশটির ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজি (বিএফজি) বলছে, আরও কিছুদিন অব্যাহতভাবে কমবে রাইনের পানি।

নদীটির পানি এখন স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। শিপিং কোম্পানিগুলো বলছে, এ অবস্থায় নদীতে বার্জ চালালে লোকসান গুনতে হবে। বিএফজি বলছে, আগামী কয়েক দিনে পানির স্তর আরও ৩০ সেন্টিমিটার নেমে যেতে পারে।

খরচ কমাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাবহনকারী এবং ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থাইসেন ও রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান বিএএসএফ- এর মতো শিল্প জায়ান্টগুলোর কাঁচামাল পরিবহনে নিয়োজিত বার্জ চলাচল ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। শিপিং ব্যয় বেড়েছে পাঁচগুণ পর্যন্ত।

কয়েক শতাব্দী ধরে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাইন নদী। ১ হাজার ২৩৩ কিলোমিটারের (৭৬০ মাইল) নদীটি সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা থেকে জার্মানি হয়ে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম দিয়ে উত্তর সাগরে মিলেছে।

আরও কিছুদিন অব্যাহতভাবে কমবে রাইন নদীর পানি। ছবি: সংগৃহীত

রাইনে বার্জ চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালে ছয় মাস রাইনে বার্জ চলাচল বন্ধ থাকায় ৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান গুনতে হয়েছিল। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ বছর জার্মানির অর্থনীতির ০.২ পয়েন্ট ক্ষতি হবে।

ফ্রান্সের নদীগুলোতে পণ্যবাহী বার্জ চলাচল তুলনামূলক কম। তবে দেশের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা পারমাণবিক প্ল্যান্টগুলোকে শীতল রাখতে নদীর পানি অপরিহার্য। বিদ্যুতের দাম সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছালেও, পানির অভাবে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ইডিএফ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে।

ইতালির সবচেয়ে দীর্ঘ নদী পো-র পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক-দশমাংশে নিচে নেমে গেছে। এ সময়ে যা থাকার কথা তার চেয়ে ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। গত বছরের নভেম্বর থেকে এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ভুট্টা ও রিসোটো ধানের উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পো নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভুট্টা ও রিসোটো ধানের উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির কৃষির ৩০-৪০ শতাংশ উৎপন্ন হয় পো উপত্যকায়। ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়া এবং পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এবার ফসলের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হতে পারে।

পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ২ হাজার ৮৫০ কিলোমিটারের দানিউব নদী দিয়েও পণ্য পরিবহন ব্যাপক বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নদী দিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে জ্বালানি পরিবহন করা হয়। সংকটজনক পরিস্থিতে নদী খনন শুরু করেছে সার্বিয়া, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া সরকার।

পানির স্তর নেমে যাওয়ায় দানিউব নদীতে পণ্য পরিবহন ব্যাপক বিঘ্নিত হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

পানি সংকটে বিপদে পড়েছে নরওয়ে। দেশটির মোট উৎপাদনের ৯০ শতাংশই আসে জলবিদ্যুৎ থেকে। নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকায় রপ্তানি বন্ধ করতে যাচ্ছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি।

খরার তীব্রতায় ধুঁকছে স্পেন ও পর্তুগাল। নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে জুলাইয়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, এক হাজার বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক সময় পার করছে এই দুটি দেশ। স্পেন জলপাই উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত হলেও এবার আবাদে ধস নামবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটি বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জলপাই তেল উত্পাদন করে।

ইউরোপীয় কমিশনের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের আন্দ্রেয়া টরেটি বলেন, ‘গত ৫০০ বছরে ২০১৮ সালের খরাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এখন মনে হচ্ছে, এ বছর আরও বাজে পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

‘এ অবস্থা আরও তিন মাস চলবে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে, বড় বিপর্যয়ে পড়বে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপ।’

এ বিভাগের আরো খবর