‘মা, বাবা কখন আসবে বাড়িতে?’ রোজই দুই মেয়ের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনতে হতো শান্তি দেবীকে।
জবাবে একই কথা বারবার উচ্চারণ করতে হয়েছে এ নারীকে। তিনি সন্তানদের বলেছেন, কাজের জন্য দূরে কোথাও গেছেন তাদের বাবা; ফিরবেন শিগগিরই।
দিন পেরিয়ে বছর যায়। স্ত্রীর কথামতো বাড়ি ফিরেন না দুই মেয়ের বাবা।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী হিমালয়ের সিয়াচেন হিমবাহে ১৯৮৪ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন দুই মেয়ের জনক চন্দ্রশেখর হারবোলা। টহল অভিযানের সময় বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলটিতে তার আর দেখা মেলেনি।
বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটিতে চন্দ্রশেখরসহ ২০ সদস্যের সেনা ইউনিটটি পড়েছিল তুষারধসের কবলে।
ঝুঁকিপূর্ণ সিয়াচেন হিমবাহ মনুষ্য বসবাসের উপযোগী নয়। এরপরও ওই অঞ্চলে সেনাচৌকি খালি করতে চায় না ভারত ও পাকিস্তান।
১৯৮৪ সালে হিমবাহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও হয়। সেখানে তুষারধসে নিয়মিতই মৃত্য হয় সেনাদের।
একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল হারবোলা ও তার সহকর্মীদের। ওই তুষারধসের সময় ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও নিখোঁজই রয়ে যান হারবোলাসহ পাঁচজন।
নিখোঁজ ঘোষণার সময় হারবোলার বড় মেয়ে কবিতার বয়স ছিল আট বছর। ছোট মেয়ে ববিতা ছিল ৪ বছরের।
প্রায় চার দশক পর প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে বাবার হদিস পেল, তবে তাকে জীবিত অবস্থায় পাননি তারা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিয়াচেনে গত সপ্তাহে হারবোলার মরদেহের সন্ধান পায় একটি ইউনিট। এ খবর পেয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে পরিবারটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, শান্তি দেবী এবং তার দুই মেয়ে কবিতা ও ববিতার আশা ছিল, কোনো এক দিন জীবিত অবস্থায় পাওয়া যাবে হারবোলাকে। তাদের ধারণা ছিল, পাকিস্তানি সেনারা হয়তো ধরে নিয়ে গেছে তাকে, কিন্তু সব আশা ব্যর্থ করে দিয়ে নিথর হারবোলা ফিরলেন কফিনে।
হিমালয়ঘেরা রাজ্য উত্তরাখণ্ডে নিজ গ্রামে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় শেষকৃত্য হয়েছে তার।
গত ৩৮ বছর ধরে হারবোলার স্ত্রী শান্তি দেবীর মূল কাজ ছিল দুটি। এগুলো হলো সন্তানদের বড় করে তোলা আর হারবোলার বাড়ি ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করা।
শান্তির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, তবে স্বামীকে জীবিত দেখতে পারেননি তিনি।