যখন জ্বালানিসংকট থাকে তখন সাধারণ মানুষ গোসলের সময় সারাক্ষণ শাওয়ার ছেড়ে রাখার বদলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছেই অনেক কিছু বাঁচাতে পারে (বিদ্যুৎ) বলে মনে করেন জার্মানির ব্যাডেন-ওয়ার্টেমবার্গ রাজ্যের প্রধান উইনফ্রিড ক্রেটসম্যান।
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে রাজ্যের বাসিন্দাদের গোসল কমানোর আহ্বান জানিয়ে এর উপায় বাতলে ক্রেটসম্যান বলেন, 'আপনাকে সব সময় গোসল করতে হবে না। সর্বোপরি ওয়াশক্লথ (পানি দিয়ে ভেজানো তোয়ালে) রয়েছে। এটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।'
একটি জরিপ বলছে, সরকারের আহ্বানে সারা দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ জার্মান নাগরিক গোসলের সময় কমিয়ে দিয়েছেন।
জ্বালানিসংকট কমাতে রাজ্যপ্রধান ব্যক্তিগত পর্যায়ে কী করছেন? তা জানতে চাওয়া হলে ক্রেটসম্যান জানান, তার বাড়ির ছাদে একটি বিশাল সৌরবিদ্যুৎ রিগ লাগানো আছে, একটি মাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি চালান এবং একটি মাত্র রুম গরম রাখেন।
কোল্ড শাওয়ার নেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর থেকে ভালো কিছু (ওয়াশক্লথ) করেন তিনি।
গ্রীষ্মে জার্মানদের মধ্যে কোল্ড শাওয়ার নেয়ার প্রচলন রয়েছে। যেখানে তারা শাওয়ারের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনে।
ক্রেটসম্যান জার্মানির যেই রাজ্যের প্রধান সেই রাজ্যে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। এর অবস্থান ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানিতে।
ব্যাডেন-ওয়ার্টেমবার্গ রাজ্যের রাজধানী স্টুটগার্টে রয়েছে বিশ্বের নামকরা গাড়ির ব্র্যান্ড পোর্শে ও মার্সিডিজ-বেঞ্জের সদর দপ্তর।
এদিকে গত মাসে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে জার্মানির হ্যানোভার শহরের নগর কর্তৃপক্ষ আবাসিক ভবনগুলোতে গরম পানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ঘর গরম রাখার সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমিয়ে আনা হয়েছে।
হ্যানোভার শহরে বন্ধ গরম পানি সরবরাহ
এমনকি নতুন নিয়মের অধীনে সরকারি কর্মকর্তারাও গরম পানি পান না। কাজের সময় ঠান্ডা পানিতে হাত ধুতে হয়।
কর্তৃপক্ষের দেয়া এক নতুন নিয়মে, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ আবাসিক ভবনগুলোতে সর্বাধিক কক্ষ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। স্পোর্টস হল ও জিমে ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রাখতে পারবে না।
ফোয়ারা, টাউন হল, শহরের জাদুঘর ও অন্যান্য আবাসিক ভবনগুলোর জন্যও যেকোনো বাহ্যিক আলোকসজ্জা বন্ধ রাখা হয়েছে।
জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরেও জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য শরৎ ও শীতেও ঘর গরম রাখার তাপমাত্রা কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে ইউরোপে গ্যাসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বার্লিন চাচ্ছে গ্যাসের চাহিদা কমিয়ে আনতে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে পশ্চিমারা। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ক্রেমলিন।
পশ্চিম রাশিয়া ও জার্মানিকে সংযোগ করা গ্যাস পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিমে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয় গ্যাস রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। যদিও রাশিয়া বলছে, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে। তবে জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক দাবি করেছেন, এটি একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।
রবার্ট হাবেক বর্তমান সংকটকে অন্যতম আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ফের সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
এ ছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বিবেচনায় রেখেছে জার্মানি।