বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেলের দাম সমান হলেও কলকাতায় বাস ভাড়া ঢাকার চেয়ে কম

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৩৮

২০১৮ সালে সবশেষ সেখানে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, যখন ডিজেলের দর ছিল লিটারে ৬২ রুপি। এখন সেই দর ৯৪, মাঝে উঠেছিল ১০৬। তবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। প্রথম চার কিলোমিটারের ভাড়া ৮ রুপি, এরপর প্রতি কিলোমিটার ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ সেখানে বেশি দূরত্বে গেলে ভাড়া কমে। কিন্তু ঢাকায় কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ঠিক করে দেয়া হয়েছে আড়াই টাকা। যাত্রী যত দূরই যাক না কেন, ভাড়ার হার একই। অবশ্য ঢাকার মতো কলকাতাতেও বাড়তি আদায়ের অভিযোগ আছে।

জ্বালানি তেলের দাম পশ্চিমবঙ্গের সমান করার পর রাজ্যের রাজধানী কলকাতার বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে সেখানকার উদাহরণ আর গ্রহণ করা হয়নি।

সেখানে বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ঢাকার সমান হলেও প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঢাকার চেয়ে কম। সেখানে বাসে টিকিট দেয়া হয়, যা ঢাকায় নেই।

আবার কলকাতায় একজন যাত্রী বেশি দূরত্বের গন্তব্যে গেলে তার ভাড়ার হার কমে আসে, সেটি ঢাকা তো দূরের কথা, বাংলাদেশের কোথাও নেই।

এখানে দূরপাল্লায় ৫০ কিলোমিটারের ক্ষেত্রে ভাড়ার যে হার, ৫০০ কিলোমিটারের ক্ষেত্রেও একই হার। অথচ এই দেশের লঞ্চের ক্ষেত্রে উদাহরণ আছে যে বেশি দূরত্বে গেলে ভাড়ার হার কম হয়।

ভারতের জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত ওঠানামা করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে। আর দাম বাড়লে বা কমলেই বাস ভাড়া বাড়ে বা কমে না।

২০১৮ সালে সবশেষ সেখানে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, যখন ডিজেলের দর ছিল লিটারে ৬২ রুপি। এখন সেই দর ৯৪, মাঝে উঠেছিল ১০৬। তবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি।

সে সময় বাস ভাড়া ঠিক করা হয় প্রথম চার কিলোমিটারের জন্য ৮ রুপি এবং পরের প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৭৫ পয়সা করে। আবার বেশি দূরত্বে গেলে সেটিও কমে আসে।

কিন্তু বাংলাদেশে ভাড়া ঠিক করার ক্ষেত্রে এই স্ল্যাব রাখা হয়নি। এখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতি কিলোমিটার সরাসরি আড়াই টাকা আর দূরপাল্লায় ঠিক করা হয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা হারে।

অবশ্য কলকাতাতেও ঢাকার মতোই বাস ভাড়া বেশি আদায় করার প্রমাণ মিলছে। তার পরও যতটা বেশি নিচ্ছে, সেটি ঢাকায় নির্ধারণ করা হারের চেয়ে সাশ্রয়ী। ঢাকায় নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এমনকি সরকারি পরিবহন কোম্পানি বিআরটিসি ও সরকারি আবাসন সংস্থা রাজউকের বাসেও বেশি আদায় হয়। এর মধ্যে হাতিরঝিলে রাজউক পরিচালিত চক্রাকার বাসে ভাড়া যেকোনো বেসরকারি কোম্পানির ভাড়ার হারের চেয়ে অনেক বেশি।

কলকাতায় বাসের ভাড়া নির্ধারণ যে পদ্ধতিতে

২০১৮ সালের চার্ট অনুযায়ী বাসের ন্যূনতম ভাড়া ৮ রুপি, যেটি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ টাকার মতো। এর পরের ১২ কিলোমিটার গেলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া যোগ করা হয় ৭৫ পয়সা হারে।

অর্থাৎ কেউ ১২ কিলোমিটার গেলে ভাড়া হবে ১৪ রুপি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় ১৭ টাকা।

কিন্তু বাংলাদেশে ১২ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ৩০ টাকা, আদায় করা হচ্ছে কোথাও ৪০, কোথাও তার চেয়ে বেশি।

অথচ দেশেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ২০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি মিনিটে ওয়েটিংয়ে ২ টাকা।

লঞ্চ ভাড়ার ক্ষেত্রেও আছে একই উদাহরণ। প্রথম ১০০ কিলোমিটারের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ৩০ পয়সা আর ১০০ কিলোমিটারের বেশি হলে তখন প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া হয় ২ টাকা হারে।

বিআরটিএ চুপ, যাত্রীর পক্ষের লোকরা অসহায়

ঢাকার তুলনায় কলকাতার যাত্রীদের বাস ভাড়া কম নির্ধারণের বিষয়ে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত ৬ আগস্ট বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার পর সড়কে যেসব বিশৃঙ্খলা ও বাড়তি ভাড়ার সমস্যা ছিল, সেগুলো নিয়ে পরদিন থেকে নিউজবাংলা প্রতিবেদন তৈরির জন্য বহুবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেছে।

বহু ফোন তিনি উপেক্ষা করেছেন। একবার কল করে এসএমএস পাঠাতে বলেন। তার কাছে অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি আমাদের দেশে মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না।’

প্রতিবেশী দেশগুলো সেবার মানের দিকে এগিয়ে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যাত্রীসেবার মান তলানিতে। লক্কড়-ঝক্কড় বাসকে সর্বোচ্চ দামের ধরে ভাড়া ঠিক করা হয়। এসব অনিয়ম নিয়ে সরকার ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) কিছুই বলে না।’

গণপরিবহন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাস ভাড়া বৃদ্ধির সময় ১৮টি খাত বিবেচনা করে ভাড়া বাড়ানো হয়। যেগুলো কিছুটা অতিরঞ্জিত। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে ওই ক্ষেত্রে ব্যয় হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

তিনি বলেন, ‘বাস কোম্পানির হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এ ছাড়া কিছু হিডেন কস্ট রয়েছে। যেমন, চাঁদা।’

ওয়েবিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিল নামে কোনো দর্শন পৃথিবীর কোথাও নেই। বাংলাদেশের মালিক সমিতি তাদের উদ্ভাবনী মেধাশক্তি দিয়ে এই প্রথা চালু করেছে। কিন্তু এই মেধা যদি তারা যাত্রীসেবায় ব্যয় করত, তাহলে যাত্রীদের সেবার মানের অনেক উন্নতি হতো।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের সমস্যা কলকাতাতেও আছে

ঢাকার মতোই কলকাতাতেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের সমস্যা আছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটিও নিয়মিত হয়। বাড়তি ভাড়া আদায়ে বাসে ভুয়া টিকিট বিতরণের অভিযোগও আছে।

যেমন প্রথম চার কিলোমিটারে নির্ধারিত ভাড়ার ৮ রুপির জায়গায় তেলের বাড়তি দরের কথা বলে ১০ রুপি নেয়া হচ্ছে। পরের স্টেজে ১০ রুপি দিয়ে যে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যেত, এখন সেখানে ১৫ রুপি নেয়া হচ্ছে। তারপর স্টেজে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ রুপি নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন রুটে একই দূরত্বের জন্য বিভিন্ন রকম ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বাস মালিকরা তাদের নিজেদের মতো করে ভাড়া ঠিক করে নিয়েছেন।

আমতলা শিয়ালদা ২৩৫ নম্বর রুটে ন্যূনতম বাস ভাড়া ১০ রুপি। পরের স্টেজে বেহালা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের জন্য দিতে হচ্ছে ১৫ রুপি। আবার আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে সল্টলেক নিউ টাউন বাসে ধর্মতলা থেকে করুণাময়ী পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ২০ থেকে ২৫ রুপি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

২৩৯ নম্বর রুটে বাবুঘাট নিউ টাউন বাসে ন্যূনতম ভাড়া ১০ রুপি। কিন্তু তার পরের ধাপে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য কোথাও ১৫ কোথাও ২০ আবার কোথাও ২৫ রুপি পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে প্রবল বচসা, উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন।

বাস মালিক ও যাত্রী- দুই পক্ষই চাইছে সরকার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বাস ভাড়ার তালিকা দিক। তাহলে কোনো পক্ষের আর ঠকতে হয় না।

তবে সরকারি বাসে কোনো ভাড়া বাড়েনি । বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয় নেই। কিন্তু রাস্তায় সরকারি বাসের দেখা মেলা ভার।

রবীন্দ্রসদন থেকে ২৩০ নম্বর বাসে উঠেছেন রীনা রায়, যাবেন শিয়ালদা। তার সাফ কথা, 'ফেয়ার চার্ট দেখাতে হবে। আর বাড়তি ভাড়ার টিকিট দিতে হবে। তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।'

শিয়ালদা থেকে বড়িষা যাবেন পীযূষ কান্তি সরকার। বাস ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার ফেয়ার চার্ট দিচ্ছে না। যে যার মতো ভাড়া নিচ্ছে! মগের মুলুক চলছে।'

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি বলেন, 'যদি অতিরিক্ত ভাড়া চান কন্ডাক্টর, তাকে ভাড়াটা দিয়ে টিকিটটা নিন। তারপর যেখানে নামছেন, সেখানকার স্থানীয় থানায় ওই বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করুন। সেই অভিযোগের রিসিভ কপি আমাকে পাঠিয়ে দিন। আমি পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বলব, ওই বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’

বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছে এসইউসিআই পার্টি। দলের নেতা প্রভাশিস জানার অভিযোগ, বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করে সেই কপি পরিবহন দপ্তরে পাঠানো হলেও সরকারের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘সরকার ভাড়া বাড়াবে না এ কথা বলে, কার্যত মালিকদের সুবিধা করে দিয়েছে। জনগণের ওপর অলিখিতভাবে বাড়তি ভাড়ার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার সব জেনে বুঝে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।'

বেহালা শিয়ালদা মিনিবাস রুটের ড্রাইভার বাবুল লস্কর বলছেন, 'যখন ৮ টাকা ন্যূনতম ভাড়া ছিল, তখন এক লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৬২ টাকা। আর এখন ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে। তেলের দাম যদি কমে, সে অনুযায়ী সরকার যদি ভাড়ার তালিকা দেয়, সবাই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিলে, কোনো ঝামেলা থাকবে না।'

বড়িশা জয়েন্ট কাউন্সিল বাস সিন্ডিকেটের অমল সাহা বলেন, ‘বাস ভাড়া নিয়ে মাঝেমধ্যে গণ্ডগোল হয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সবাই, সব মেনে নিচ্ছেন। মেনে নিয়েই কাজ করছেন। সরকারের কাছে বারবার বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ নতুন ভাড়ার তালিকা দিচ্ছে না। উল্টো হুমকি দিচ্ছে, আগের ভাড়াই দিতে হবে। এভাবে তো আর গাড়ি চলে না। কিন্তু পাবলিক মোটামুটি মেনে নিয়েছেন। এই অবস্থায় গাড়ি চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর