বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রুশদির হামলাকারী হাদি ছিলেন ‘ধর্মপ্রাণ’, শিখছিলেন বক্সিং

  •    
  • ১৩ আগস্ট, ২০২২ ১৫:৪৪

হাদি মাতারের সাবেক সহপাঠী গ্যাব্রিয়েল সানচেজ বলেন, ‘হাদি এমন একটি জঘন্য অপরাধ করেছে শুনে আমি হতবাক হয়ে গেছি। ক্যালিফোর্নিয়ার এলিজাবেথ লার্নিং সেন্টারে সে আমার সহপাঠী ছিল। হাদি ছিল খুবই ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান। সে বিতর্কে অংশ নিত এবং তার বেশ কয়েকজন বন্ধু ছিল।’

ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে আটক হাদি মাতার স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড ধর্মপ্রাণ। তার বন্ধুরা বলছেন, হাদির এমন সহিংস রূপ তাদের অচেনা।

নিউ ইয়র্কে শুক্রবার সকালে সালমান রুশদিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ২৪ বছর বয়সী হাদিকে।

গুরুতর আহত রুশদির সার্জারির পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছেন, সম্ভবত তিনি এক চোখ হারিয়েছেন। তার যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশদির অবস্থা ভালো নয়।

আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের হাতে আটক হাদি মাতারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও তিনি নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকায় বসবাস করছিলেন।

হাদির জন্মের আগে তার বাবা-মা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইয়ারুন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। ইয়ারুন পৌরসভার প্রধান আলী কাসেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লেবাননের সংবাদপত্র ডেইলি আন-নাহারকে তিনি বলেন, হাদির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি কখনও ইয়ারুনে আসেননি।

হাদির বিরুদ্ধে এখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, রুশদির অবস্থা দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হবে তার বিরুদ্ধে।

হাদি মাতার ২০১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ জার্সিতে আসেন। ক্যালিফোর্নিয়ার এলিজাবেথ লার্নিং সেন্টারে তার সহপাঠীরা জানান, তারা হাদিকে প্রচণ্ড ধার্মিক হিসেবে জানতেন।

হাদি মাতারের সাবেক সহপাঠী গ্যাব্রিয়েল সানচেজ বলেন, ‘হাদি এমন একটি জঘন্য অপরাধ করেছে শুনে আমি হতবাক হয়ে গেছি। ক্যালিফোর্নিয়ার এলিজাবেথ লার্নিং সেন্টারে সে আমার সহপাঠী ছিল। হাদি ছিল খুবই ধর্মপ্রাণ এক মুসলমান। সে বিতর্কে অংশ নিত এবং তার বেশ কয়েকজন বন্ধু ছিল।’

গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘হাদি আমাদের স্কুলের রেস্টরুমে অজু করত। একবারই ওকে প্রচণ্ড রেগে যেতে দিখেছি। বছরের শেষের দিকে আমাদের জীববিজ্ঞান শিক্ষকের ক্লাসের মূল্যায়নে সে লিখেছিল, তিনি (শিক্ষক) ধর্ম সম্পর্কে যেভাবে কথা বলেন, তাতে মনে হয় ধর্মকে তিনি ঘৃণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাদি আমার সঙ্গে যে কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছে, তার একটি ছিল দয়া। সালমান রুশদির ওপর যে হাদি এই আক্রমণ করেছে, সে আমার অতীতের চেনা হাদি নয়। কারণ আমি যাকে চিনতাম, সে দয়ার কথা বলত।’

হাদি মাতারের আগের রেকর্ড জানতে এবং হামলার উদ্দেশ্য বের করতে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের মেজর ইউজিন স্ট্যানিসজেউস্কি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাতের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি শিয়া চরমপন্থা এবং ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) প্রতি সহানুভূতিশীল।

হাদির ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়েও তথ্য পেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। এ ড্রাইভিং লাইসেন্সে তিনি ব্যবহার করেছেন লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গ্রুপ হিজবুল্লাহ নেতা মুগনিয়ার নাম। জিহাদ মুগনিয়া ২০১৫ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।

ভুয়া নামে হাদি মাতারের ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড। ছবি: সংগৃহীত

নিউ জার্সিতে আসার পর গত কয়েক বছরে হাদি মাতারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে গত এপ্রিলে তিনি বক্সিং শিখতে শুরু করেন।

স্টেট অফ ফিটনেস বক্সিং ক্লাবের এক মুখপাত্র জানান, মাতার এপ্রিলে বক্সিং গ্রুপ ক্লাস করতে ভর্তি হন। গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ক্লাবে সদস্যপদ বহাল রাখেন।

নিউ জার্সিতে হাদির প্রতিবেশীরা তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি। আশপাশের সবাইকে অনেকটা এড়িয়ে চলতেন হাদি।

এক প্রতিবেশী জানান, তারা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে হাদি মাতারকে শনাক্ত করেন।

একটি হাসপাতালের সাবেক কর্মী আন্তোনিও লোপা বলেন, ‘আমি হাদি মাতারের বাড়ির সামনের রাস্তার উল্টো দিকে থাকি। প্রায়ই ওকে বাড়ি ফিরতে দেখেছি, তবে কখনও কথা হয়নি।’

৭০ বছর বয়সী লোপার ধারণা, হাদির বাসায় আরও ছয়-সাতজন থাকতেন। সম্ভবত তারা সবাই আত্মীয়। তিন থেকে চার বছর আগে তারা দ্বিতল ভবনটিতে আসেন।

নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে শুক্রবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালান হাদি মাতার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুশদিকে ২০ সেকেন্ডে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলার পর রুশদি তৎক্ষণাৎ মেঝেতে পড়ে যান।

আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেখককে ঘিরে ফেলেন। অনুষ্ঠানে আনুমানিক আড়াই হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রুশদিকে মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় এবং তিনি তার রক্তের ওপরই লুটিয়ে পড়েন।’

হামলায় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পান। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা, যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।

১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এ লেখক।

স্যাটানিক ভার্সেস রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এ বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।

ওই বই প্রকাশের পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষার অনুবাদকও।

এ বিভাগের আরো খবর