বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০ রুপির জন্য চতুর্বেদীর ২২ বছরের লড়াই

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২২ ২১:৪২

ট্রেনের প্রতিটি টিকিটের দাম ৩৫ রুপি ছিল। চতুর্বেদী দুটি টিকিট নিয়ে কেরানিকে ১০০ রুপির একটি নোট দিয়েছিলেন। ৭০ টাকার পরিবর্তে কেরানি তার কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৯০ রুপি। ১০ রুপি তাকে ফেরত দেয়া হয়।

একেই বলে ধৈর্য। নয়তো ২০ রুপির জন্য দীর্ঘ ২২ বছর কেউ মামলা চালিয়ে যায়? তাও আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে! অবশেষে গত সপ্তাহে মামলার রায় আসে তার পক্ষে।

সময়টা ১৯৯৯ সাল। উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা তুঙ্গনাথ চতুর্বেদী রেলযাত্রার জন্য দুটি টিকিট কিনেছিলেন। সেদিন তার কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার চেয়ে ২০ রুপি বেশি নেয়া হয়েছিল

ঘটনাটি ঘটে মথুরা সেনানিবাস রেলওয়ে স্টেশনে। পেশায় আইনজীবী চতুর্বেদী বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি।

ভোক্তা আদালত গত সপ্তাহে চতুর্বেদীর পক্ষে রায় দেয়। রেলওয়েকে বলা হয়, সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে বাদীকে।

চতুর্বেদী বলেন, ‘এই মামলায় ১০০টিরও বেশি শুনানিতে অংশ নিয়েছি। মামলা লড়তে যে শক্তি এবং সময় হারিয়েছি, তার মূল্য আপনি দিতে পারবেন না।’

ভারতে ভোক্তা আদালত বিশেষভাবে পরিষেবা সম্পর্কিত অভিযোগগুলোর ফয়সালা করে। তবে এসব আদালত থাকে মামলায় ঠাসা। কখনো কখনো সাধারণ মামলাগুলোর সমাধানে কয়েক বছর লেগে যায়।

ঘটনায় সময় চতুর্বেদীর বয়স ছিল ৪২ বছর। মথুরা থেকে মোরাদাবাদে যাচ্ছিলেন তিনি। একজন টিকিট-বুকিং কেরানি তার কেনা দুটি টিকিটের জন্য অতিরিক্ত চার্জ করেছিলেন।

প্রতিটি টিকিটের দাম ৩৫ রুপি ছিল। চতুর্বেদী দুটি টিকিট নিয়ে কেরানিকে ১০০ রুপির একটি নোট দিয়েছিলেন। ৭০ টাকার পরিবর্তে কেরানি তার কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৯০ রুপি। ১০ রুপি তাকে ফেরত দেয়া হয়।

চতুর্বেদী সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তারা বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি। তাই উত্তর-পূর্ব রেলওয়ের (গোরখপুর) বুকিং ক্লার্কের বিরুদ্ধে মথুরার একটি ভোক্তা আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন চতুর্বেদী৷

তিনি জানান, ভারতে বিচারব্যবস্থা যে ধীর গতিতে কাজ করে, তার জন্য এত বছর লেগেছে।

‘রেলওয়ে মামলাটি খারিজ করার চেষ্টা করেছিল। তারা জানিয়েছিল, রেলওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ একটি রেলওয়ে ট্রাইব্যুনালে সুরাহা করা উচিত, ভোক্তা আদালতে নয়। তবে আমি ২০২১ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে প্রমাণ করি বিষয়টির শুনানি ভোক্তা আদালতে হতে পারে।’

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, বিচারক রেলওয়েকে ১৫ হাজার রুপি জরিমানা করেন। অর্থাৎ আদালত রেলওয়েকে ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১২ শতাংশ হারে সুদে ২০ রুপি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আর যদি ৩০ দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ প্রদান না করা হয়, তবে সুদের হার হবে ১৫ শতাংশ।

চতুর্বেদী বলেন, ‘যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছি তা খুব অল্প। মামলাটি আমাকে যে পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে তা অপূরণীয়। আমার পরিবার বহুবার মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়েছিল।

‘এটা আসলে অর্থের বিষয় নয়। এটা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই। তাই মামলাটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর যেহেতু আমি নিজে একজন আইনজীবী, তাই নিজেই মামলাটি লড়েছি। বাড়তি অর্থ খরচ হয়নি।

‘কোনো ব্যক্তির সরকারি পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, তাকে জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এটাই নিয়ম। আপনি যদি এমন করেন, তবে দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য অনেকটাই সহজ হবে।‘

মামলা অন্যদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে বিশ্বাস তুঙ্গনাথ চতুর্বেদীর। তিনি বলেন, ‘লড়াই কঠিন মনে হলেও, হাল ছেড়ে দেবেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর