ভারতের আপত্তির মুখে চীনা জাহাজের নির্ধারিত সফর পিছিয়ে দিতে দেশটিকে অনুরোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। গত সপ্তাহেই সামরিক জাহাজটিকে আসার অনুমতি দিয়েছিল কলম্বো। লঙ্কান সরকার বলছে, প্রতিবেশী ভারতের কূটনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে তারা।
ইউয়ান ওয়াং ৫ সামরিক জাহাজটি বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে পৌঁছানোর কথা। অঞ্চলটির ইজারা নিয়ে সেখানে বন্দর নির্মাণ করেছিল চীন। জাহাজটি এখন পূর্ব ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছে।
ইউয়ান ওয়াং ৫-কে চীনের সর্বশেষ প্রজন্মের স্পেস-ট্র্যাকিং জাহাজগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এটি স্যাটেলাইট, রকেট এবং আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
পেন্টাগন বলছে, পিপলস লিবারেশন আর্মির স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স এসব জাহাজ পরিচালনা করছে।
নয়াদিল্লির আশঙ্কা, তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, হাম্বানটোটাকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করবে। ১.৫ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত বন্দরটি এশিয়া থেকে ইউরোপে প্রধান শিপিং রুটের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১২ জুলাই পাঁচ দিনের জন্য জাহাজটিকে আসার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সোমবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় হাম্বানটোটা বন্দরে উল্লিখিত জাহাজের পরিদর্শন পিছিয়ে দেয়ার জন্য তারা চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করেছে।
ভারত গত মাসের শেষ দিকে বলেছিল, জাহাজটির পরিকল্পিত সফর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি তার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অবশ্যই রক্ষা করবে। শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানায় ভারত।
জাহাজ নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখার জন্য কিছু দেশের তথাকথিত ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ একেবারেই অযৌক্তিক।
‘শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। এ অবস্থাকে পুঁজি করে শ্রীলঙ্কার স্বাভাবিক বিনিময় ও সহযোগিতায় হস্তক্ষেপ করা নৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনাকারী মৌলিক নিয়মের পরিপন্থি।’
দুই বছর আগে হিমালয় সীমান্তে সশস্ত্র সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় এবং চার চীনা সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দেশ দুটির সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। চীন এবং ভারত দুই দেশই শ্রীলঙ্কায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ভারত চলতি বছর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি সাহায্য করেছে শ্রীলঙ্কাকে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহায়তা পেতে নিজেদের অবকাঠামো ঋণ পুনর্গঠনে চীনের চুক্তি শ্রীলঙ্কার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিগত তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন করেছিল চীন। ২০০৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কাকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে বেইজিং।