স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেল হেফাজতে থাকা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষকে ১৪ দিনের জন্য সেন্সর করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দলে তার সেন্সর প্রসঙ্গে কুনাল ঘোষ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি বোরোলিন সঙ্গে নিয়ে চলি। জীবনের ওঠা-পড়া যাতে সহজে গায়ে না লাগে।'
২৩ জুলাই হাইকোর্টের নির্দেশে ইডির তদন্তকারীরা রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে ও অন্যান্য স্বজনের বাড়িতে তল্লাশি চায়। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি নগদ টাকা, বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি, বিদেশি মুদ্রা ও সোনার গয়না উদ্ধার করে ইডির তদন্তকারীরা। পরে একইভাবে অর্পিতার কলকাতা বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেও ২৯ কোটি টাকা, বিদেশি মুদ্রা, সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়।
২৩ জুলাই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তে অসহযোগিতা ও বক্তব্যে অসংগতির জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়ি থেকে এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তার নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পার্থবাবু আমার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করেছেন। আমাকে পাগল বলেছিলেন। আমার যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ওনাকে যেন কোনোভাবে বাড়তি সুবিধা দেয়া না হয়।'
কুনাল ঘোষের আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘যদি কেউ বিচারে দোষী হয়, ফাঁসিতে চড়ালেও আমি কিছু মনে করব না।'
টাকা উদ্ধার নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তৃণমূল কংগ্রেস পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং প্রশাসনিক সমস্ত পদ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেয়। দলের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চুরির দায় কোনোভাবে দল নেবে না।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মমতার কথায় উৎসাহিত হয়ে কুনাল পার্থ সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন।
যদিও দলের সেন্সরের পর কুনাল ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি শব্দও বলব না।'
দুই দফায় ১২ দিন ইডি হেফাজত শেষে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পিএমএলএ আদালতের বিচারক পার্থ ও অর্পিতাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি জেলে ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায় আলিপুরের নারী জেলে রয়েছেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ আগস্ট।