বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরমাণু যুদ্ধ থেকে এক সুতা দূরে বিশ্ব

  •    
  • ২ আগস্ট, ২০২২ ১৪:৩৮

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের পাশাপাশি এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে একটি ভুল হিসাব পারমাণবিক ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। গুতেরেস পরমাণু ধ্বংসের আশঙ্কা এমন সময় করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, উত্তর কোরিয়া সপ্তমবারের মতো পরমাণু পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে একসময় যেই পরমাণু যুদ্ধকে অসম্ভব ভাবা হতো, তা এখন বিশ্ববাসীর কাছে বাস্তব মনে হচ্ছে। পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আর কেউই অসম্ভব বলছে না।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের পাশাপাশি এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে একটি ভুল হিসাব পারমাণবিক ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।

সোমবার জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ (এনপিটি) চুক্তির ৫০ বছরে এসে একটি পর্যালোচনা বৈঠকে এমন ভয়ানক সতর্কতার কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

গুতেরেস বলেছেন, পর্যালোচনা বৈঠকটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন স্নায়ুযুদ্ধের পর বিশ্ব এমন পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা আর দেখেনি।

তিনি বলেছেন, 'এই বৈঠকটি আমাদের জন্য সুযোগ, যা বিপর্যয়কে এড়াতে সাহায্য করবে এবং মানবতাকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের দিকে নিয়ে যাবে।'

একই সঙ্গে গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ১৩ হাজারের বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ও দেশগুলো এর পেছনে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে মিথ্যা নিরাপত্তা খুঁজছে।

গুতেরেস পরমাণু ধ্বংসের আশঙ্কা এমন সময় করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া সপ্তমবারের মতো পরমাণু পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর কারিগরি সক্ষমতা আছে বলে দাবি করেছেন দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি। যদিও দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

তবে ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে তাহলে একই পথে হাঁটতে পারে সৌদি আরবও

গত মার্চে হিরোশিমায় আমেরিকার প্রতিনিধিদের সফর উপলক্ষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশটির রাষ্ট্রীয় মাধ্যম এনএইচকেকে বলেছেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি ‘অবিশ্বাস্যরকম বাস্তব’।

এ ছাড়া তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়া কতটা কঠিন।

একই সঙ্গে কিশিদা ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে আগ্রাসন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিধি ও শান্তির জন্য হুমকি।

এদিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগেই রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে, শুধু রাশিয়ার কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এমন তো নয়।

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার নীতির বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, ‘একমাত্র রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকিতে পড়লেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে দেশটি।’

বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র দেশ জাপান, যারা পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষদিকে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদনে বলছে, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের ফলে বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তা স্নায়ুযুদ্ধের ৩৫ বছর ধরে কমতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা আগামী কয়েক দশকে আবার বৃদ্ধি করবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনটি বলছে, স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আগামী বছরগুলোতে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়বে।

এসআইপিআরআইয়ের ডিরেক্টর ড্যান স্মিথ বলেছেন, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পারমাণবিক অস্ত্র অপসারণের ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য এসেছিল। স্নায়ুযুদ্ধের পর বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

জানুয়ারি ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২-এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সামান্য কমলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংখ্যা বাড়বে।

স্টকহোমভিত্তিক এই পিস রিসার্চের গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচির পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান জানিয়েছেন, প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র তাদের অস্ত্রাগার বাড়াচ্ছে এবং সামরিক কৌশলেও পারমাণবিক অস্ত্রের ভূমিকাকে তীক্ষ্ণ করছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা।

বিশ্বে মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। রাশিয়ার কাছে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটির কাছে রয়েছে মোট ৫ হাজার ৯৭৭টি ওয়ারহেড, যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা পারমাণবিক ওয়ারহেডের থেকে ৫৫০টি বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর