পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) মঙ্গলবার এক রায়ে বলেছে, তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তান (পিটিআই) বিদেশ থেকে নিষিদ্ধ অনুদান গ্রহণ করেছে। এ জন্য দলটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস বাবরের এক মামলায় এই রায় দিয়েছে ইসিপি। মামলাটি ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ঝুলে ছিল।
রায় সকাল ১০টায় ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও আধাঘণ্টা দেরিতে তা প্রকাশ করা হয়।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রায়ের কপি তারা হাতে পেয়েছে।
রায়ে বলা হয়, দলটি ‘জ্ঞাতসারে এবং ইচ্ছাকৃত’ ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ধনকুবের আরিফ নকভীর উটন ক্রিকেট লিমিটেডের কাছ থেকে ওই অনুদান নিয়েছে। দলটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ২১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ ডলার গ্রহণ করেছে।
ইসিপি বলছে, পিটিআই উটন ছাড়াও ‘জ্ঞাতসারে এবং ইচ্ছাকৃত’ ব্রিস্টল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস (আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠান), ই-প্ল্যানেট ট্রাস্টি (আইসল্যান্ডের প্রাইভেট রেজিস্ট্রার কোম্পানি), এসএস মার্কেটিং ম্যানচেস্টার (যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান), পিটিআই ইউএসও এলএলসি-৬১৬০ এবং পিটিআই ইউএসও এলএলসি-৫৯৭৫ থেকে অনুদান নেয়। এমন অনুদান নেয়া ‘পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এবং আইনের লঙ্ঘন’ বলে বলা হয়।
এ ছাড়াও পিটিআই কানাডা করপোরেশন এবং পিটিআই ইউকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি থেকেও অনুদান নিয়েছে। উভয় কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া অনুদান পাকিস্তানের আইনকে লঙ্ঘন করে।
এর বাইরেও পিটিআই অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডানপেক লিমিটেড এবং পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ব্রাদার্স, জেইন কটন এবং ইয়াং স্পোর্টসের কাছ থেকেও অনুদান নিয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছে, পিটিআই লাভবান হতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় এক নারী রমিতা শেঠির কাছ থেকে অনুদান নিয়ে পাকিস্তানের আইন ভঙ্গ করেছে।
ইসিপি বলছে, কমিশনের কাছে আগে পিটিআইয়ের আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য ছিল। এ ছাড়া আরও যে ১৩টি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আসা অনুদান সম্পর্কে কোনো কিছু জানায়নি দলটি।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তারা পিটিআইয়ের আরও ১৩টি অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছে যেগুলো দলটির উচ্চ ও প্রাদেশিক বড় বড় নেতারা খুলেছেন এবং বিদেশ থেকে এসব অর্থ এনেছেন।
এ ছাড়া দলটি তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য জানায়নি যেগুলো পিটিআইয়ের বড় বড় নেতারা পরিচালনা করেন।
এসব পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন আইনের ১৭(৩) (৩) ধারা পরিপন্থি। এই ধারায় বলা হয়, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ আসবে তার সোর্স উল্লেখ করতে হবে।
ইসিপি তাদের রায়ে আরও বলেছে, ইমরান খানের দল গত পাঁচ বছরের যে হিসাব কমিশনে জমা দিয়েছে সেটি সঠিক তথ্যবহুল নয়।
পিটিআইয়ের ফাওয়াদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, যেসব অর্থ দেশে অনুদান হিসেবে পিটিআই পেয়েছে সবই এসেছে বিদেশে অবস্থান করা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন পিএমএল-এন, জেইউআই এবং পিপিপি প্রবাসী পাকিস্তানিদের শত্রু বানাচ্ছেন। আমরা প্রবাসী পাকস্তানিদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করি এবং তারাই পিটিআইকে অব্যাহতভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যে মামলাটি হয়েছিল সেটি কোনোভাবেই ‘নিষিদ্ধ অনুদানের’ মামলা ছিল না। এমনকি যেসব ব্যাংক হিসাবের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে দলের প্রধানের কোনো যোগসূত্রও নেই।’’