বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লিজ ট্রাসে থ্যাচারের ছায়া

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২২ ২৩:৩০

ইউগোভ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩১ শতাংশ সুনাককে ভোট দেয়ার পক্ষে; যেখানে ৪৯ শতাংশ ট্রাসকে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷

ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টি ডানপন্থি রাজনীতিবিদ লিজ ট্রাস। ৪৭ বছর বয়সী ট্রাস পার্লামেন্টে আসেন ২০১০ সালে। চার বছর এমপি পদে থাকার পর মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন ট্রাস। দায়িত্ব পালন করেন ডেভিড ক্যামেরন সরকারের পরিবেশ, খাদ্য এবং গ্রামীণবিষয়ক সচিব হিসেবে।

পরে টেরিজা মে সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ট্রাস। ২০২১ সালে হন পররাষ্ট্র সচিব।

ট্রাস অবশ্য শুরু থেকেই রক্ষণশীল ছিলেন না। বামপন্থি মা-বাবার কাছে তার বেড়ে ওঠা। ছিলেন মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের কিশোরী সদস্য। মাত্র ১৯ বছর বয়সে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ রাজনীতির লেকচারার ডেভিড জেফরি বলেন, বর্তমানে ট্রাস যে পার্টি করছেন (কনজারভেটিভ) তা সহজাত স্বাধীন মুক্তবাণিজ্যকে সমর্থন করে না। এটা আসলে অসমতা কমানোর লক্ষ্যে জনসন কর্তৃক প্রচারিত একটি নীতিকে নির্দেশ করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে ২০১৬ সালের জুনে হওয়া গণভোটে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। ট্রাস চাইছিলেন ব্লকে থেকে যেতে।

জেফরি বলেন, ‘তিনি (ট্রাস) গণভোটে “রয়ে যাওয়া” সমর্থন করেছিলেন। এ অবস্থানে তার দৃঢ়-ত্যাগী রাজনীতিবিদের তকমা জুটেছিল।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাসের কাজ অপ্রীতিকর ছিল বলে মনে করেন ডেভিড জেফরি।

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ট্রাসের কার্যকাল বেশ কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি একজন অত্যন্ত সক্রিয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব ছিলেন। তবে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তাকে বিবর্ণ মনে হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছিলেন।’

প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাকের তুলনায় ট্রাস মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের মধ্যে ছিলেন, যারা এ মাসের শুরুতে জনসনের প্রতি অনুগত ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সে সময় দলীয় বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

এতে এটা স্পষ্ট যে আনুগত্যের জন্য দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন ট্রাস। নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এই আনুগত্য বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ট্রাস ওয়ালেসসহ শীর্ষস্থানীয় রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাচ্ছেন। এমনকি তাকে সমর্থন দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলা টম টুগেনধাতও।

কিছু দিনের মধ্যেই জনসনের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা।

ইউগোভ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩১ শতাংশ সুনাককে ভোট দেয়ার পক্ষে; যেখানে ৪৯ শতাংশ ট্রাসকে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷

এখানে একজনের জয় অনেকটা নিশ্চিত মনে হচ্ছে। তবে এখনই কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সিনিয়র লেকচারার অ্যালান কনভারি।

তিনি বলেন, ‘তিনি (ট্রাস) শক্তিশালী অবস্থান থেকে শুরু করেছেন। কনজারভেটিভ সদস্যদের মতামত জরিপ দেখায়, তিনি এগিয়ে আছেন। যা-ই হোক, তাকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। সদস্যপদে আবেদন করার জন্য সুনাক তার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।’

পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ট্রাস আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ প্রচার করেছিলেন।

২০২১ সালে ট্রাস চ্যাথাম হাউসে একটি বক্তৃতার সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তার বোঝার রূপরেখা দিয়েছিলেন। রাশিয়া ও চীনের মতো স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে একটি আদর্শিক লড়াইকে চিহ্নিত করেছিলেন।

ট্রাস ১১টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাজ্যের মধ্যে ব্যাপক ও প্রগতিশীল বাণিজ্য চুক্তিকে (সিপিটিপিএ) সামনে এনেছেন, যেটিকে তিনি চীনের বিরুদ্ধে একটি বাধা হিসেবে বিবেচনা করেন। জানিয়েছিলেন, লন্ডনের এতে যোগ দেওয়া উচিত।

ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ট্রাস আসলে থ্যাচারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের প্রশংসা করতে কখনই ক্লান্ত হতে দেখা যায়নি ট্রাসকে।

কয়েক মাস ধরে ট্রাস ব্রিটিশদের পেশাদারভাবে স্টাইল করা ফটো দিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন, যা প্রায় থ্যাচারের মুহূর্তগুলোর কার্বন কপি। যেমন যখন তিনি মস্কো গিয়েছিলেন, তখন একটি লম্বা কোট এবং পশমের টুপি পরেছিলেন, ঠিক ৩৫ বছর আগে থ্যাচার যেমনটা করেছিলেন।

ট্রাস ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড (৩৭ বিলিয়ন ডলার) ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অনেকটা থ্যাচারের মতো। থ্যাচার ১৯৮০-এর দশকে ব্যক্তিগত আয়কর কমিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলায় অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ট্রাসের মতে, এই পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম টেনে ধরতে পারবে।

‘ট্রুসোনোমিকস’ হলো ট্রাসের প্রস্তাবের জন্য ব্যবহৃত শব্দ। সরবরাহ-সদৃশ অর্থনীতির তার নিজস্ব সংস্করণ। এটা থ্যাচারের অর্থনৈতিক নীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য।

ট্রাসের পরিকল্পনার মধ্যে আছে করপোরেট আয়করের পরিকল্পিত বৃদ্ধি প্রত্যাহার এবং সামাজিক নিরাপত্তা হারের সাম্প্রতিক বৃদ্ধিকে ফিরিয়ে আনা। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে ‘পরিচয়ের রাজনীতির’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ট্রাস।

জেফরি বলেন, ‘কোনো প্রশ্নই নেই যে ট্রাস মাঝেমধ্যে নিজেকে থ্যাচার মনে করেন। থ্যাচারের একটি পরিষ্কার ধারণা ছিল যে তিনি দেশটিকে কেমন দেখতে চান। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে ট্রাসের দৃষ্টিভঙ্গি একই।’

থ্যাচার ছাড়াও বরিস জনসন-পরবর্তী ধারাবাহিকতাও মেনে চলতে চান ট্রাস। বিশেষ করে ব্রেক্সিট-সংক্রান্ত ইস্যুগুলো।

তবে যখন তাকে ব্লকের সঙ্গে কঠিন আলোচক হিসেবে দেখা যায়, তখন মনে হয় এ ইস্যুতে সমস্যার সমাধানে তিনি আগ্রহী না।

২০১৭ সালে তার ইউ-টার্ন (প্রো-রেমেন থেকে প্রো-লিভ পর্যন্ত) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ট্রাস জানিয়েছিলেন, ‘বড় বড় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়নি। সেই সুযোগগুলো খুঁজছি।’

ট্রাস ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনাকের চেয়ে জনসনের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছেন মিনিস্টার ফর ব্রেক্সিট অপরচুনিটি অ্যান্ড গভর্মেন্ট অ্যাফইসিএন্সি কনভারি।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (ট্রাস) ডাউনিং স্ট্রিট অপারেশনে জনসন-যুগের আনফোর্সড ত্রুটিগুলো দূর করতে চাইবেন। ব্রাসেলসকেও সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করবেন। যা-ই হোক, যদি তিনি ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন, তবে অর্থনৈতিক মন্দাও কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর