ভারতের কেরালায় বিরল ভাইরাস মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ রোববার জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ নিয়ে ২২ বছর বয়সী যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।
যুবকটির জন্ম ত্রিশুর জেলার চাভাক্কাদ কুরেঞ্জিউর অঞ্চলে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভয়াবহ ক্লান্তি ও জ্বর নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স এমন কোনো মরণঘাতী রোগ নয়। তবে কেন এতে এমন একজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যুবকের মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওই যুবকের মৃত্যু চিকিৎসাসেবা পেতে দেরি হওয়ার কারণে হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
এরই মধ্যে ওই যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুন্নায়ুরে সভা ডেকেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ২১ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কেরালায় ফেরেন ওই যুবক। এ সময় তার মধ্যে দুর্বলতা থাকলেও মাঙ্কিপক্সের কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায়নি।
২৭ জুলাই অতিমাত্রায় জ্বর নিয়ে কেরালার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ওই যুবক। এর তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তার মৃত্যু হয়।
তার আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, আমিরাতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে গিয়েছিল তিনি।
সেখানে তার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছেন আত্মীয়-স্বজন। আমিরাতে তার শারীরিক পরীক্ষার একটি রিপোর্টও পাওয়া গেছে। তবে সেখানে যুবকের নাম লেখা ছিল না।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের ৯৮ শতাংশই সমকামী কিংবা উভকামী পুরুষ, এমনটি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেই সঙ্গে বিরল এই ভাইরাসটিতে আক্রান্তের ৯৫ শতাংশই এখন ইউরোপ ও আমেরিকায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৭৮টি দেশে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে ইউরোপে ৭০ শতাংশের বেশি আর আমেরিকায় ২৫ শতাংশ।
গত শনিবার মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করার জন্য সতর্কতা জারির ঘোষণা দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বিরল মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ায় ওয়াশিংটন সরকার এরই মধ্যে রোগের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে।
এর আগে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার কিছু অংশে দেখা যেত। বিশেষ করে সংক্রমিত বন্যপ্রাণী যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালির মাধ্যমে ছড়াত। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে ‘নাইজেরিয়া ভ্রমণে যাওয়া’ একজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে ২০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
এরই মধ্যে স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
১৯৮০ সালে নির্মূল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেট এবং সংক্রমিত রোগীর ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে।