বিশ্বসেরা অর্থনীতি বিশ্লেষক সংস্থা মুডিস, ফিচ ও এসঅ্যান্ডপি এর রেটিং পাকিস্তানের নাজুক অর্থনীতির সূচককে আরও নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
দেউলিয়া হবার শুরুতে যে অবস্থাটি শ্রীলঙ্কার হয়েছিল ঠিক সেই পথেই এখন হাঁটছে বলে উঠে এসেছে রেটিং সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণে।
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি আর জ্বালানির দাম এবং বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরেই অর্থনীতিকে সচল রাখতে লড়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। তাই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর অন্যতম এই দেশটি শিগগিরই ঋণ খেলাপি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডেইলি টাইমস এর উদ্ধৃতি দিয়ে রেটিং এজেন্সিগুলো বলছে, দেশটির অর্থনৈতিক পতন মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয় যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তবে এটিকে আগের রেটিংয়ে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে এটি কীভাবে করা হবে- তা এখন বড় প্রশ্ন।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র দেড় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলার মজুত আছে। এ বছরও দেশটির ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। নাজুক এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএমএফ এর কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইছে পাকিস্তান। এ পরিমাণ অর্থ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে আর কতদিন চলবে!
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহযোগিতা না পেলে দ্বিতীয়বারের মতো ঋণ খেলাপি হতে পারে পাকিস্তান।
এদিকে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মুর্তজা সৈয়দ বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত যেতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস আছে।’
কিন্তু পাকিস্তানের অর্থনীতিতে দ্রুত স্থিতিশীলতা আনতে ডলার মজুত প্রয়োজন। বর্তমানে পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা দেশটির জন্য একটি কঠিন লক্ষ্য বলে মনে হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নিম্নমুখী রেটিংকে ঊর্ধ্বমুখী করতে দেশটিকে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যদিও আশঙ্কা আছে, বিষয়গুলো ভাল হতে শুরু করার আগে আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। আর কঠিন এই সময়টিতে দেশটির মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের ওপরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সবকিছুরই প্রভাব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে। দেশটির গণমাধ্যম বলছে, যারা খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে নীচে রয়েছে তারাই এই সমস্ত ক্ষতি বহন করবে।
পাকিস্তানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর
আরেকটি বিষয় হলো- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্যও পাকিস্তান আগুনের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক অভিজাতরা যদি তাদের তিক্ত ও কুৎসিত যুদ্ধকে কিছুক্ষণের জন্য থামাতেন এবং অর্থনীতিতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হন তবে হয়তো দেশটি সুড়ঙ্গের শেষে একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পাবে।
আমেরিকান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের রেটিং পাকিস্তানের ঋণের দৃষ্টিভঙ্গিকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে গেছে। বাজারগুলো মনে করছে, পাকিস্তান শিগগিরই ঋণ খেলাপি হয়ে শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার এসঅ্যান্ডপি এর বিবৃতিতে বলা হয়- দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে সহায়তা দ্রুত হ্রাস পেলে বা ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে গেলে পাকিস্তানকে আরও অবনমিত করা হতে পারে।
সম্প্রতি নিজেদের মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ মান কমতে দেখেছে পাকিস্তান। ডলারের বিপরীতে দেশটির রুপি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানও সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
দেশটির সরকারকে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে শুরু করে চীন ও সৌদি আরবের মতো কয়েকটি দেশ থেকে বিপুল অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ নিতে নানা কসরত করতে হচ্ছে।