অ্যাডলফ হিটলারকে কে না জানেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। যিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন।
একজন গণহত্যাকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত অ্যাডলফ হিটলার। নাৎসী এই নেতা ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত হিটলার ইহুদিসহ অনেকের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন।
ইহুদি ছাড়া এই গণহত্যার শিকার হয়েছে সাধারণ যাযাবর, রোমানি যাযাবর, পোল্যান্ডবাসী, কমিউনিস্ট, সমকামী, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী এবং মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কিছু মানুষ।
এত কিছুর পরও তবু তার ব্যবহৃত অনেক কিছুই এখনো মানুষের কছে আকর্ষণীয়। যেগুলো মিলিয়ন-বিলিয়ন দাম দিয়ে কিনেছেন অনেকেই। নিলামে তোলা হয়েছে অনেকবার।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে হিটলারের একটি ঘড়ি নিলামে ১.১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা। ঘড়িাট কিনেছেন একজন নাৎসি নেতা।
হিউবার টাইমপিস এই ঘড়িটি একজন লোকের কাছে বিক্রি হয়েছিল। যার পরিচয় জানা যায়নি। এতে একটি স্বস্তিকাচিহ্ন রয়েছে। যাতে AH (অ্যাডলফ হিটলার) খোদাই করা আছে।
মেরিল্যান্ডের ‘আলেকজান্ডার ঐতিহাসিক নিলামে’ বিক্রির আগে ইহুদি নেতারা এই নিলামের নিন্দা জানিয়েছেন। কারণ, নাৎসি জার্মানির নেতৃত্ব দেয়াকালীন হিটলার প্রায় ১১ মিলিয়ন লোককে হত্যা করেন। যাদের মধ্যে ছয় মিলিয়ন ইহুদি ছিল।
ঘড়িটির ক্যাটালগ থেকে বোঝা যায়, এটি সম্ভবত ১৯৩৩ সালে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দেয়া হয়। যে বছর তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হন।
ধারণা করা হয়, ১৯৪৫ সালের পর টাইমপিসটি পুনরায় বিক্রি করা হয়। যেটি এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রজন্মের কাছে বিক্রি হয়।
নিলামের অন্য জিনিসগুলোর মধ্যে ছিল হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউনের একটি পোশাক, নাৎসি কর্মকর্তাদের অটোগ্রাফ করা ছবি। ইহুদিদের জন্য ‘জুড' শব্দ লিখে ছাপানো একটি জার্মান হলুদ কাপড়ও ছিল, যা ইহুদিদের হত্যাকাণ্ডের সময় নাৎসিরা তাদের হয়রানি করার জন্য হলুদ ব্যাজ হিসেবে পরতে বাধ্য করেছিল।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ৩৪ জন ইহুদি নেতার স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠিতে এই নিলামকে ‘ঘৃণ্য' বলা হয়েছে। পাশাপাশি নাৎসি আইটেমগুলোকে নিলাম থেকে সরানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইহুদি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাব্বি মেনাচেম মার্গোলিন বলেছেন, ‘নাৎসি পার্টিকে সমর্থন করে যারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল, এই লেনদেন তাদের কোন আদর্শকে নির্দেশ করে।’
তিনি বলেন, যদিও এটা ঠিক যে মানুষকে ইতিহাস জানতে হবে। বৈধ নাৎসি নিদর্শনগুলোকে জাদুঘর এবং উচ্চশিক্ষার জায়গাগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে যে জিনিসগুলো বিক্রি হচ্ছে তার কারণ স্পষ্ট নয়।’
ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ডি গ্রিনস্টেইন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইতিহাস ভালো হোক বা খারাপ, তা অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত। ইতিহাস ধ্বংস করলে তার কোনো প্রমাণ থাকে না।’
নিলাম ঘর থেকে পাওয়া নথিগুলো এটি প্রমাণ করে না যে হিটলার আসলে ঘড়িটি পরেছিলেন। তবে একজন বিশেষজ্ঞের একটি মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় এটি হিটলারের ছিল।
ডয়চে ভেলে রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘড়িটি ১ মিলিয়নের বেশি দামে বিক্রি হলেও নিলাম ঘর দুই থেকে চার মিলিয়ন হতে পারে বলে অনুমান করে।