ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ২১ জুলাই ১০ দিন বিরতির পর নডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে রাশিয়া। তবে রুশ জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম বলেছে, গ্যাসপাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজের কারণে তার প্রধান পাইপলাইনের মাধ্যমে ইইউতে আবারও ব্যাপকভাবে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে আরেকটি টার্বাইন বন্ধ করলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে, যা বর্তমানে সরবরাহকৃত গ্যাসকে অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
তবে গ্যাজপ্রমের পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে জার্মানি। দেশটির সরকার বলছে, গ্যাস সরবরাহ সীমিত করার কোনো প্রযুক্তিগত কারণ নেই।
গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ কমানো হলে শীতের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুত করা আরো কঠিন হবে। শীতকালে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কারণ নাগরিকদের আবাসনগুলো গরম রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
রাশিয়া এরই মধ্যে রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপের জবাবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
এদিকে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। সেখানে গ্যাসের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই হাওয়া লেগেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
রাশিয়ার গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণকারী সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের একটি প্রকল্প নর্ড স্ট্রিম এজি পাইপলাইন। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া; পরে জার্মানির কাছ থেকে সেই গ্যাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। ২০০৫ সাল থেকে চালু হয় এই প্রকল্প।
গত মাসে রাশিয়া জার্মানিতে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তখন বলা হয়, টারবাইনে সমস্যা থাকার কারণে গ্যাসের প্রবাহ কমে গেছে।
সে সময় গ্যাজপ্রম দাবি করে, টারবাইন মেরামতের জন্য কানাডার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু সেই কোম্পানি ঠিক সময়ে টারবাইন মেরামত করতে পারেনি।
তবে সে সময়ই জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক দাবি করেছিলেন, এটি একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।
জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সির প্রধান ক্লাউস ম্যুলার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, এমন হতে পারে যে, রাশিয়া নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।
সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, গ্যাসলাইনটিকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে ১০ দিন সময় প্রয়োজন তা দীর্ঘায়িত করতে পারে রাশিয়া। আর তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হতে পারে।