তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি মেমোতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। তবে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এটিকে আইনি প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির টিম শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তে সহযোগিতা না পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেন ইডির তদন্তকারীরা।
নাকতলার বাড়ি থেকে পার্থকে গ্রেপ্তারের পর আইনি প্রক্রিয়ায় তার কিছু বলার থাকলে কাকে জানাবেন, তা জানতে চান ইডি কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়েও কথা বলতে তাকে সুযোগ দেয়া হয়। তখন পার্থ কথা বলতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে রাতে ও দিনে তিন দফা চেষ্টা করেও পার্থ কথা বলতে পারেননি। কল রিসিভ করেননি মমতা।
পার্থের যোগাযোগচেষ্টার সূত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও ফোন নম্বর নথিভুক্ত করা হয় অ্যারেস্ট মেমোতে। তবে তা মানতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা।
পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমান শিল্পপ্রযুক্তিমন্ত্রী পার্থকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।মেমোতে মমতার নাম থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, ‘এটা হয়ে থাকলে তা অবাঞ্ছিত এবং অপ্রয়োজনীয়। মুখ্যমন্ত্রী এসবের কিছুই জানেন না।
‘পার্থের দুর্নীতির বিষয়ে ইডির কোনো তথ্য-প্রমাণ আদালতে মান্যতা পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে তিনি যত বড় নেতা হোন না কেন, তৃণমূল কাউকে অন্যায় করতে বলেনি। তাই দল এ ক্ষেত্রে দায় নেবে না, রাজনৈতিকভাবে জড়াবে না।’
তবে সিপিএম নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এ বিষয়ে ভিন্নমত দেন। তিনি বলেন, ‘এটা তৃণমূলের দ্বিচারিতা। পার্থবাবু তৃণমূলের মহাসচিব, তিনি ঘটনায় যুক্ত অথচ তৃণমূল যুক্ত নয় বলে দাবি করছে। মানুষকে কি গাধা ভাবেন তারা? দুর্নীতির বিষয়ে এ লড়াইটা, কে কোথায় চাকরি পেল, তা নিয়ে নয়। গোটা প্রশাসনকে যেভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই।’
বিজেপির শ্রমিক ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অ্যারেস্ট মেমো টেকনিক্যাল বিষয়, সেখানে নাম, ফোন নম্বর থাকার বিষয় নিয়মতান্ত্রিক। কিন্তু শিক্ষা দুর্নীতির যে ঘটনা, সেটি তো সংগঠিত অপরাধ। তদন্তে অন্যদের নামও আসতে পারে।’
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের গোল্ডেন সিটি সাউথ আবাসনের ফ্ল্যাটই দুর্নীতির কেন্দ্র ছিল বলে দাবি করেছে ইডি। সেখান থেকে গত শনিবার ২২ কোটির বেশি নগদ টাকা, ৫০ লাখ টাকার স্বর্ণ, বিদেশি মুদ্রা, ১৮টি মোবাইল, জরুরি নথি জব্দ করেছেন তদন্তকারীরা।
পার্থকে ১৪ দিন ও অর্পিতাকে ১৩ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেছে ইডি।