ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। পশ্চিমা বাধা উপেক্ষা করে এই সামরিক অভিযান চালানোয় একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে দেশটি। ইউরোপসহ পুরো বিশ্বেই রুশ জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও খাদ্যশস্যের চাহিদা রয়েছে, পাশাপাশি ইউক্রেন থেকেও পুরো বিশ্বেই রপ্তানি হয় গম, সূর্যমুখী তেল।
পশ্চিমাদের দাবি, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্ব এখন খাদ্যসংকটে পড়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের জন্য তারা সরাসরি মস্কোকেই দায়ী করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোই বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের জন্য দায়ী- এমন পশ্চিমা দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। উল্টো পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারাই অন্য দেশগুলোর ওপর তাদের আধিপত্য তৈরি করার চেষ্টা করে।
কায়রোতে আরব লীগের বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সত্যকে বিকৃত করেছে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমাদের বিষয়ে আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা (পশ্চিমারা) বলে যে প্রত্যেককে অবশ্যই একটি নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে সমর্থন করতে হবে এবং পশ্চিমারা যেকোনো পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে সমাধান করতে চায় এবং নিয়মগুলো তার ওপর নির্ভর করেই লেখা হয়।‘
আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবউল ঘিইতের সঙ্গে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ
আরব লীগে বক্তৃতার আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পশ্চিমারা জানে ইউক্রেনের অবস্থা কী এবং কার এতে ক্ষতি হবে, এরপরও তারা সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করেছে।
একই সঙ্গে তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাতে আফ্রিকার দেশগুলোর ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানেরও প্রশংসা করেন।
স্থানীয় এক পত্রিকায় মিসর সফর উপলক্ষে ল্যাভরভ লেখেন, ঔপনিবেশিক জাল থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর মুক্তির সংগ্রামে সমর্থন করে যাবে রাশিয়া।
মিসরের পাশাপাশি ল্যাভরভ আফ্রিকার আরও তিন দেশ ইথিওপিয়া উগান্ডা ও কঙ্গো সফর করবেন।
মিসরের সঙ্গে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়ার থেকে গম ও সশ্রস্ত্র বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র ক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি। এমনকি মিসরে প্রচুর রুশ পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে রাশিয়া থেকে মিসরে পর্যটক আসে না বললেই চলে।
ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের কারণে খাদ্যশস্যের ঘাটতির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরব ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওডেসা বন্দর দিয়ে ইউক্রেনকে শস্য রপ্তানির সুযোগ দিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলছে, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আফ্রিকার চাহিদার ৪০ শতাংশ গম আমদানি করা হতো।
মহাদেশটিতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন।