মস্কোর বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা’ কাজ না করায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন কৌশল দরকার বলে মনে করেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
শনিবার রোমানিয়ায় দেয়া এক বকতৃতায় তিনি এমনটাই জানান।
অরবান বলেন, ‘একটি নতুন কৌশল প্রয়োজন যা শান্তি আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেবে। যুদ্ধ জয়ের পরিবর্তে ভালো শান্তি প্রস্তাবের খসড়া তৈরির জন্যও নতুন কৌশল দরকার।’
ফ্রেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) দেয়া সব নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন অরবান। বলেছিলেন, ‘আমরা সব নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছি। কোনো কিছুতেই বাধা দেব না। ইইউর প্রধানমন্ত্রীরা যেসব বিষয়ে একমত হতে সক্ষম হয়েছেন, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং সমর্থন করছি।’
এপ্রিলে টানা চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন অরবান। সেসময়ই ভোল পাল্টান তিনি। তিনি বলেন, হাঙ্গেরি প্রতিবেশি দেশ ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে দূরে থাকবে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই হাঙ্গেরি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। দেশটি নিশ্চিত ছিল, রাশিয়ার উপর ইউরোপের অপরিহার্য জ্বালানি নির্ভরতা শেষপর্যন্ত বিভিন্ন দেশগুলোর ভণ্ডামিকে অনিবার্য করে তুলবে।
তিনি বলেছিলেন, হাঙ্গেরি রাশিয়ান গ্যাস আমদানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করতে ইচ্ছুক নয়। কারণ এটি তার অর্থনীতিকে দুর্বল করবে, যা রাশিয়ান গ্যাস আমদানির উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
এছাড়া রাশিয়ার ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপের তোড়জোড় চলছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নে, ঠিক তখনই রাশিয়া থেকে পরমাণু জ্বালানি নিয়ে বিমান অবতরণ করে হাঙ্গেরিতে।
পরমাণু চুল্লি নির্মাণসংক্রান্ত মস্কোর সঙ্গে করা চুক্তির অংশ হিসেবে পরমাণু জ্বালানিবাহী এই চালান হাঙ্গেরিতে পৌঁছায় বলে সেসময় জানায় দেশটি।
রোমানিয়াতে অরবান বক্তৃতায় বলেন, ইউক্রেনের বিষয়ে পশ্চিমা কৌশলটি চারটি স্তম্ভের উপর নির্মিত। এগুলো হলো- রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধে জিততে পারে ইউক্রেন, যে নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে দুর্বল করবে এবং তার নেতৃত্বকে অস্থিতিশীল করবে, নিষেধাজ্ঞাগুলো ইউরোপের চেয়ে রাশিয়ার বেশি ক্ষতি করবে এবং বিশ্ব ইউরোপকে সমর্থন করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলের বিষয়ে অরবান বলেছেন, ‘এই কৌশলটি ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইউরোপের সরকারগুলো ভেঙে পড়ছে। জ্বালানি শক্তির দাম বেড়েছে এবং এখন একটি নতুন কৌশল প্রয়োজন ছিল।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি গাড়িতে বসে আছি যার চারটি টায়ারেই পাংচার। এটা একেবারে পরিষ্কার যে এইভাবে যুদ্ধ জেতা যাবে না।’
ইউক্রেন কখনই এভাবে যুদ্ধে জিততে পারবে না বলে মনে করেন অরবান। বলেন, ‘কারণ রাশিয়ান সেনাবাহিনী অপ্রতিরোধ্য।’
যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, ‘শুধু রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনাই সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে পারে। কারণ রাশিয়া নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায় যা শুধু ওয়াশিংটনই দিতে পারে।’