বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইইউ ছেড়ে হাঙ্গেরি কেন রাশিয়ার আলিঙ্গনে

  •    
  • ২৪ জুলাই, ২০২২ ১৮:২৮

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতি হাঙ্গেরির আগ্রহ অনেকের কাছে প্রচণ্ড বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সাইয়োর্তো হাঙ্গেরিতে দুটি পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে আর্জি জানিয়েছেন। এই চুল্লি দুটি নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসাটম।

ইউরোপে শীত মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই জ্বালানি চাহিদার জোগান নিশ্চিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে-গোপনে চলছে নানান দেনদরবার। এরই মধ্যে রাখঢাক না রেখেই রুশ সহায়তা চেয়েছে হাঙ্গেরি। দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে মস্কোতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে হাঙ্গেরির দ্বন্দ্ব। কিন্তু কেন? যুক্তরাজ্যের দ্য স্পেকটেটরে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন সারোয়ার প্রতীক।

চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মস্কোতে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সাইয়ার্তোকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় দিলখোলা ভঙ্গিতে কথা বলেছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের ডানহাত হিসেবে পরিচিত সাইয়ার্তো স্বীকার করে নেন, আসন্ন তীব্র শীত মৌসুমে তার দেশ রাশিয়ার জ্বালানি সহায়তা ছাড়া চলতে পারবে না। জবাবে ল্যাভরভ প্রতিশ্রুতি দেন, বর্ধিত গ্যাস সরবরাহের জন্য হাঙ্গেরির অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে ‘বিবেচনা করবে’ ক্রেমলিন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি সদস্য দেশ তার জনগণকে উষ্ণ রাখতে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারকে তোয়াজ করছে- এমন অপমানজনক পরিস্থিতি ইইউর জন্য কল্পনা করাও কঠিন।

ল্যাভরভ-সাইয়োর্তো বৈঠকটি রাশিয়ার জন্য ছিল একটি স্বপ্ন। অর্থনৈতিক চাপের মুখে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় ঐক্য ক্রমেই ভেঙে পড়ছে এবং ডনবাসে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে এই বৈঠককে।

ভয়ানক অনিবার্য পরিস্থিতির মুখে রাশিয়ান গ্যাসের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মাত্রা কমছে। রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ব্লকের দেশগুলো মে মাসে অনেক চেষ্টা করে রাশিয়ান তেলের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞার দিকে গিয়েছিল।

তবে এর পরই আশঙ্কা তৈরি হয়, পুতিন জার্মানির মতো দেশগুলোকে শীত মৌসুমে ঠান্ডায় জমিয়ে দিতে গ্যাসের জোগান বন্ধ করে দেবেন। এই আশঙ্কা থেকেই ইউরোপের সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের জ্বালানির ব্যবহার যথাসাধ্য কমিয়ে আনতে এবং আসন্ন সংকট সম্পর্কে সচেতন হতে সতর্ক করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতি হাঙ্গেরির আগ্রহ অনেকের কাছে প্রচণ্ড বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সাইয়োর্তো হাঙ্গেরিতে দুটি পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে আর্জি জানিয়েছেন। এই চুল্লি দুটি নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানি রোসাটম।

তবে এমন যুক্তিও দেয়া যেতে পারে, বুদাপেস্ট বরং সৎ আচরণ করছে, যেখানে ইউরোপের অন্যরা হাঁটছে ঘুরপথে। জার্মানি নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে আরও বেশি গ্যাসের জোগান পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। যদিও দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এর আগে দাবি করেছিলেন, ‘পুতিনের আগ্রাসী, সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারত্ব অকল্পনীয়।’

বিপরীতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই হাঙ্গেরি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। দেশটি নিশ্চিত ছিল, রাশিয়ার ওপর ইউরোপের অপরিহার্য জ্বালানি নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ভণ্ডামিকে অনিবার্য করে তুলবে। গত সপ্তাহেই অরবান বলেছিলেন, ইইউ রাশিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে গিয়ে ‘নিজের ফুসফুসে নিজে গুলি করেছে’।

সংকটের মাঝে হাঁসফাঁস করা ইইউ একমাত্র উপায় হিসেবে ব্রাসেলসে আরও শক্তি কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে। উরসুলা ভন ডের লেয়েন গত বুধবার একটি জরুরি আইনের প্রস্তাব করেন, যা ইউরোপীয় কমিশনকে সদস্য দেশগুলোতে জ্বালানি রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেবে। এই আইন তৈরির ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর স্বাভাবিক ভেটো ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে।

এই প্রস্তাব পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে বাজেভাবে মোকাবিলা করার একটি চেষ্টামাত্র। শীত মৌসুম সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের সরকার এখন গ্যাসের মজুত নিয়ে উৎকণ্ঠিত। এমন অবস্থায় ব্রাসেলসকে অতিরিক্ত ক্ষমতাবান করা নয়, দেশগুলো বরং জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিত করা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন। ফলে সদস্য দেশগুলোর একটি গ্রুপের বিরোধিতার মুখে প্রস্তাবটি বাতিল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি এবং প্রচেষ্টাটি মাঠে মারা গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

ওই ঘটনার পর হাঙ্গেরি আরেকটি অবন্ধুসুলভ আঘাত করেছে। বুদাপেস্ট ইইউর প্রস্তাবিত জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ছাড়াও আরেক ধাপ এগিয়ে আগামী মাস থেকে গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে অরবান বেশি জোর দিচ্ছেন জাতীয়তাবাদের ওপর। তিনি বিশ্বাস করেন, ইইউর অবস্থান হাঙ্গেরির জন্য ক্ষতিকর এবং নিজ দেশের জ্বালানি নীতি পরিচালনার ক্ষমতা নিজেদের হাতেই থাকা উচিত।

তার এই মনোভাব ইউক্রেনকে সাহায্য করছে না। তবে হাঙ্গেরির অবস্থানের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে বুদাপেস্টের অর্থনৈতিক সংকট এবং বাস্তবকে বুঝতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অদক্ষতাকেও বিবেচনায় নেয়া উচিত। এগুলোই বুদাপেস্টকে পুতিনের আরও বেশি আলিঙ্গনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

হাঙ্গেরির অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে, সমালোচকরা মনে করছেন সেখানে ‘অরবানমিক্স’ ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। ইউরোর বিপরীতে হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রার রেকর্ড দরপতন হয়েছে, উদ্যোক্তাদের জন্য ট্যাক্স ছাড় বাতিল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বুদাপেস্টে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশে।

অরবান গত এপ্রিলে নির্বাচনের সময় হাঙ্গেরিয়ানদের যুদ্ধের প্রভাব থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ কারণে চলমান অর্থনৈতিক ঝড় তার অবস্থান দুর্বল করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইইউ নিজেও হাঙ্গেরিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কোভিড মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের অর্থ আটকে রাখার পাশাপাশি দেশটির জন্য তহবিল সহায়তা সংকোচনের নতুন ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থাটি।

ব্রাসেলস এবং বুদাপেস্টে অরবানের বিরোধীদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হাঙ্গেরিকে একটি শীতল সঙ্গ দিয়ে চলছে। এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করতে পারে। কারণ পশ্চিম থেকে সহানুভূতির ঘাটতিতে সামনের কঠিন সময়ে সাহায্যের জন্য প্রাচ্যের দিকে ফিরে তাকাতে খুব সামান্য তাগিদই বোধ করবেন অরবান।

এ বিভাগের আরো খবর