তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দুদিনের হেফাজতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মডেল অর্পিতা চ্যাটার্জিকেও কলকাতার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে নেয়া হয়েছে।
স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শনিবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পিএমএলএ আদালতে তোলা হয়। পার্থ বর্তমানে রাজ্য সরকারের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সর্বস্তরে দুর্নীতির ছাপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও।
ইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দুদিনের হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ইডির আইনজীবী ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন জানান। বিচারক দুদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার।
শুক্রবার সকাল থেকে স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে টানা ২৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পার্থ তদন্তকারীদের সহযোগিতা করেননি। এ ছাড়া বক্তব্যে অসংগতি থাকায় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ইডির তদন্তকারীরা শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার করার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর নাকতলার বাড়ি থেকে তাকে কেন্দ্রের অধীন জোকার ইএসআই হসপিটালে নিয়ে যান ইডির তদন্তকারীরা। সেখানে প্রাথমিক চেকআপের পর ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পিএমএলএ আদালতে তোলা হয় তাকে।
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মডেল অর্পিতা চ্যাটার্জি। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার রাতে ইডির তদন্তকারীরা টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসনে মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ২১ কোটির বেশি নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন। অর্পিতা পার্থের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়।
সেখান থেকে ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না, প্রচুর বিদেশি মুদ্রা ও ২০টি মোবাইল সেট বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই টাকার উৎস সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলতে না পারায় এবং বক্তব্যে অসংগতি থাকায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও শনিবার গ্রেপ্তার করেন ইডির তদন্তকারীরা।
অর্পিতার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত টাকার সঙ্গে স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী পার্থ বলেন, ‘ইডির তদন্তকারীরা আমাকে গ্রেপ্তার করা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পাইনি।’
তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, 'এই বাজেয়াপ্ত টাকার সঙ্গে তৃণমূল দলের কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে তারাই এর উত্তর দেবেন। দল এ বিষয়ে নজর রাখছে, যথাসময়ে দলের বক্তব্য জানানো হবে।’
শনিবার অর্পিতা পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। এটা বিজেপির চাল।’
এদিকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অর্পিতার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। অবশেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের ইডির দফতরে । সেখানেই রাতে তাকে জেরা করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রবিবার সকালে তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।