ইউএস ক্যাপিটলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি হামলার ঘটনা টেলিভিশন লাইভে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে দেখছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তার সন্তানরা ও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা তার সমর্থকদের সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর জন্য ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেছিলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল রায়টসংক্রান্ত কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এমনটাই বলা হয়েছে।
ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য ও প্রতিনিধি এলেন লুরিয়া বলেছেন, সে সময় সিনিয়র কর্মী, উপদেষ্টা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাবার টেবিলে বসেই তিনি ইউএস ক্যাপিটলে হামলার ঘটনাটি সরাসরি দেখছিলেন। এ সময় সবাই একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কাছে এমন পরিস্থিতিতে যা আশা করা যায় তা করার জন্য ট্রাম্পকে তারা সবাই অনুরোধ করেন।
মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও ছেলে ডন জুনিয়র এ সময় ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। যদিও ডনাল্ড ট্রাম্প তার সমর্থকদের নরকের মতো লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সস্ত্রীক ডনাল্ড ট্রাম্প
নির্বাচনে হার নিশ্চিতের পর একের পর এক টুইটবার্তায় ট্রাম্প তার সমর্থকদের উসকে দিতে থাকেন। এমনকি তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সেরও সে সময় তিনি সমালোচনা করেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেছিলেন, মাইক পেন্স তা করছে না, যা করা দরকার।
যখন তিনি ইউএস ক্যাপিটলে হামলাকারীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন, ততক্ষণে সেখানে থাকা কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
৭ জানুয়ারিও তিনি নির্বাচনের ফলাফল মানতে চাননি।
ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান নেতা ও ক্যাপিটল রায়টসংক্রান্ত সিনেট কমিটির সদস্য ম্যাককননেল বলেন, ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার জন্য ব্যবহারিকভাবে ও নৈতিকভাবেই দায়ী ট্রাম্প। এমনকি ক্যাপিটল রায়টে হামলাকারীরাও ভাবছিলেন তারা প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই এমনটা করছেন।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে টুইটার ও ফেসবুক ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছিল।
তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ইউএস ক্যাপিটলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমনটাই জানিয়েছেন একজন শীর্ষ জেনারেল।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফের মতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনাই অনুসরণ করা উচিত, কারণ ট্রাম্পই দায়িত্বে রয়েছেন, পেন্স নয়। সে সময় তাই ইউএস ক্যাপিটলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিতের পর ক্যাপিটল হিলে এক নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
এর আগে হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন সহকারী ক্যাসিডি হাচিনসন ৬ জানুয়ারি ২০২১-এর দাঙ্গা তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়ার সময় জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে উল্টে দিতে ২০২০ সালে সমর্থকদের ক্যাপিটলে ঝড় তোলার আহ্বান যখন জানিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প, তিনি তখন জানতেন যে তার সমর্থকদের কাছে অস্ত্র আছে।
হাচিনসন জানান, শুধু ট্রাম্পই নন, হোয়াইট হাউসের অনেক শীর্ষকর্তাও সহিংসতার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন।
তিনি বলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও ক্যাপিটলে মিছিলে যোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
হাচিনসন জানান, ট্রাম্প সে সময় বলেন, ‘তারা এখানে আমাকে আঘাত করতে আসেনি, ওদের ভেতরে (ক্যাপিটল হিলে) যেতে দাও।’
সে সময় ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জন র্যাটক্লিফ হোয়াইট হাউসকে বলেন, এমন ঘটনা প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারের (জো বাইডেন) জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি প্যাট সিপোলোন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেখে মনে হচ্ছে হোয়াইট হাউস দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
তবে ডনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে করা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সিলেক্ট কমিটির তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।