ইউরোপে চলছে দাবদাহ। স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্সের পাশাপাশি দাবদাহে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্যের জনজীবন। এরই মধ্যে ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখল যুক্তরাজ্য। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্কশায়ারের কনিংসবিতে ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে এবার যুক্তরাজ্যের ৩৩টি স্থানে এই রেকর্ড ভেঙে গেছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, অতিরিক্ত গরমে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা বাড়ছে। পূর্ব লন্ডনের ওয়েনিংটনে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে অনেক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
আগুন নেভাতে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের ফায়ার সার্ভিস কর্মী
লিচেস্টারশায়ার, পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ ইয়র্কশায়ার, লিঙ্কনশায়ার, হার্টফোর্ডশায়ার, সাফোক, নরফোকসহ সারা দেশের আরো অনেক স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
শত শত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ওয়েনিংটনসহ লন্ডনজুড়ে অগ্নিকাণ্ডের মোকাবেলা করছে। দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত তাপে ঘাসে লেগে যাওয়া আগুন ব্যক্তিগত সম্পতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
কর্মীরা যেসব বাসিন্দাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়েছে তারা জানিয়েছেন, আটটি বাড়ি ও একটি গির্জা অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী পুরো পরিস্থিতিকে নরক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন যে তাকে ‘বিপজ্জনক আগুন’ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে ফায়ার সার্ভিসের সুরক্ষা পরামর্শ অনুসরণ করতে বলেছেন।
কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে বনফায়ার, ও সিগারেটের আগুন ফেলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে ব্রাইটনের বিচে ব্রিটিশরা
এদিকে গতকাল যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, তীব্র দাবদাহে অক্সফোর্ডশায়ারের নরটন বিমানঘাঁটিতে রানওয়ের পিচ গলে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের বিমান বাহিনী রানওয়ে আর ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের বিকল্প রানওয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এদিকে পিচ গলে রানওয়ে অনুপযোগী হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছে লুটন বিমানবন্দরও। বিমানসেবা প্রতিষ্ঠান ইজিজেট বলছে, তাদের বেশ কিছু ফ্লাইট কাছাকাছি অন্য বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং অনেক ফ্লাইট ক্যান্সেলও হয়েছে।
বিমানবন্দরের মতো একই অবস্থা রেলস্টেশনেরও। নেটওয়ার্ক রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার লন্ডন থেকে উত্তরের লিডস ও ইয়র্কের উদ্দেশে কোনো ট্রেন ছেড়ে যাবে না।
নেটওয়ার্ক রেলের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তারা একদম দরকার ছাড়া মঙ্গলবার ভ্রমণে বের না হয়। এ ছাড়া লন্ডন, লিডস ও ইয়র্কে মঙ্গলবার অধিকাংশ গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
এরই মধ্যে দাবদাহের কারণে অনেক স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সাবওয়েতে হাতপাখা দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন একজন ব্রিটিশ নারী
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের চেনা আবহাওয়াকে বদলে দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা এখন পশ্চিম সাহারার থেকেও বেশি। দাবদাহে এরই মধ্যে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির স্বাভাবিক জনজীবন।
ইয়র্ক ও ম্যানচেস্টারের আবহাওয়া অফিস লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বড় অংশজুড়ে দাবদাহের কারণে রেড এলার্ট জারি করেছে।
গত বছর এই আবহাওয়াকেন্দ্রিক সতর্কতা চালু করার পর এই প্রথম রেড এলার্ট দেয়া হলো।
এই উচ্চ সতর্কতার মানে হলো চলমান দাবদাহ মানুষ ও অবকাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলবে, যার ফলে দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনতে হবে।
আবহাওয়া অফিসের রেড এলার্টের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থাও লেভেল ফোর এলার্ট জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের লেভেল ফোর এলার্টকে জাতীয় জরুরি অবস্থা বিবেচনা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের বেশি বেশি পানি পান করতে বলেছেন এবং স্বজন ও প্রতিবেশীদের খোঁজ রাখতে বলেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে কোবরা মিটিং হয়ে গেছে। মিটিংয়ের পর দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জরুরি সেবার কল হ্যান্ডেলারদের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
এর আগে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২০১৯ সালে কেমব্রিজে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।