বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জ্বালানি নিয়ে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি কিউবায়

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২২ ১৯:৪৫

কিউবান সরকার যানবাহনের জন্য জ্বালানির জোগান প্রায় বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে ‘দুষ্প্রাপ্য’ ডিজেল। জ্বালানি ঘাটতি এর আগেও দেখেছে কমিউনিস্টশাসিত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি, তবে এখন পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক।

স্মরণকালের ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। পাম্পের সামনে দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়েও জ্বালানি মিলছে না ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে। একই ধরনের সংকটে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে কমিউনিস্টশাসিত দেশ কিউবায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে নেয়া হয়েছে সংকোচন নীতি। যানবাহনের জন্য বরাদ্দ সীমিত করে ডিজেল পাঠানো হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে সংকটে পড়েছে পরিবহন খাত। ডিজেল পেতে দিনের পর দিন পাম্পের সামনে অপেক্ষা করছেন যানবাহন চালকরা। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন ভাষান্তর করেছেন সারোয়ার প্রতীক।

ড্যানি পেরেজের বয়স ৪৬। হাভানা থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে কিউবার পূর্বাঞ্চলে নিজ বাড়িতে যাবেন। এ জন্য গাড়ির জ্বালানি নিতে একটি ডিজেল পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে চারদিন।

ট্যাক্সিচালক জোজান রদ্রিগেজকে আরও বেশি সময় অন্য একটি পাম্পের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর লাইনে থাকার পর ডিজেল পেয়েছেন তিনি।

এ ধরনের লাইন কিউবায় এখন স্বাভাবিক ঘটনা। দেশটির সরকার যানবাহনের জন্য জ্বালানির জোগান প্রায় বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে ‘দুষ্প্রাপ্য’ ডিজেল।

জ্বালানি ঘাটতি এর আগেও দেখেছে কমিউনিস্টশাসিত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি, তবে এখন পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক।

পেরেজ বলেন, ‘অনেক খারাপ পরিস্থিতি দেখেছি, তবে এখনকার মতো নয়। আমাকে এই কদিন ট্রাকে ঘুম আর খাওয়া-দাওয়া করতে হয়েছে।’

পাম্পে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি এড়াতে দেশটির ট্রাকচালকরা হোয়াটস অ্যাপে একটি গ্রুপ করে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। জ্বালানির অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালকরা এই গ্রুপের মাধ্যমে পাম্পের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানতে পারছেন।

৩৭ বছরের ট্যাক্সিচালক রদ্রিগেজের ডিজেল ফুরিয়ে গেছে ১২ দিন আগে। এখনও তিনি জ্বালানি পাননি।

রদ্রিগেজ বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার গাড়ি চালক। নিয়মিত কর দিয়ে আসছি। আমার পরিবার এই ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল।’

কর্তৃপক্ষ বলছে, চালকরা কেবল তাদের যানবাহনের ট্যাঙ্কগুলো ভরতে পারবেন, অন্য কোনোভাবে জ্বালানি দেয়া যাবে না। সে হিসেবে রদ্রিগেজ পাবেন ৬০ লিটার ডিজেল, যা দিয়ে তিনি ৩ দিন চলতে পারবেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা না পাওয়ায় হতাশ রদ্রিগেজ।

তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন না কী হচ্ছে আসলে। যদি তারা বলতেন, দেশে কোনো জ্বালানি নেই; পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- তবে না হয় বুঝতাম।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় ডিজেল কেনার সামর্থ্য নেই কিউবা সরকারের।

অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান এনার্জি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জর্জ পিনন বলেন, ‘যা দেখছি, সেটাকে আমরা ডমিনো ইফেক্ট বলি।’

তিনি বলেন, ‘থার্মোইলেকট্রিক প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপনায় ধস নামায় ডিজেলের চাহিদা বেড়েছে। কিউবাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ডিজেল পাঠাচ্ছে না ভেনেজুয়েলা।’

কিউবায় চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ আসে ১৩টি থার্মোইলেকট্রিক প্ল্যান্ট থেকে; যার মধ্যে আটটি ৩০ বছরেরও বেশি পুরনো। সাধারণত দ্বীপের নিজস্ব অপরিশোধিত তেলের ওপর নির্ভর করে কিউবা, তবে সেখান থেকে জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই ডিজেলের দিকে ঝুঁকছে দেশটি।

করোনা মহামারির আগে কিউবায় প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল জ্বালানির ব্যবহার হতো। পেট্রল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য জ্বালানি দেশটির অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কিউবার জ্বালানির প্রায় অর্ধেক আসে দেশটির রাজনৈতিক মিত্র ভেনিজুয়েলা থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ভেনেজুলেয়া নিজেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনার কারণে জ্বালানি উৎপাদন ও জাহাজিকরণ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভেনেজুয়েলা চলতি বছর কিউবায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৬ হাজার ৬১০ ব্যারেল অপরিশোধিত পেট্রল, ডিজেল, জেট ফুয়েল ও অন্য জ্বালানি তেল পাঠিয়েছে। এই সরবরাহ গত বছরের তুলনায় কম।

সাম্প্রতিক সময়ে কিউবায় বিদ্যুতের ধারাবাহিক সংকট জনসাধারণের বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেলকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পরিস্থিতি ব্যাখা করতে হয়েছে। পাশাপাশি তিনি থার্মোইলেকট্রিক প্ল্যান্টও পরিদর্শন করেছেন।

এর মধ্যে খানিকটা স্বস্তি এনেছে রাশিয়ার সহায়তা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত সপ্তাহে সাত লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে রাশিয়ান একটি ট্যাঙ্কার কিউবায় পৌঁছেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে হাভানা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

সংকটময় পরিস্থিতিকে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মোকাবিলা করছেন কিউবার সাধারণ মানুষ। অনেকে বিষয়টি মেনে নেয়ার চেষ্টা করছেন, অনেকে আবার দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন।

ট্যাক্সিচালক পেরেজ বলেন, ‘লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার কাজ বন্ধ করার সুযোগ নেই। তবে জ্বালানি না পেলে কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।’

ট্যাক্সিচালক রদ্রিগেজ অন্য বিকল্পও মাথায় রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘প্ল্যান বি হলো গাড়ি বিক্রি করে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাব। আমি সত্যিই জানি না, কী করতে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর