বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেলের জন্য সৌদির কাছে নতজানু বাইডেন

  •    
  • ১৭ জুলাই, ২০২২ ১৬:১২

নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য সৌদি বাদশাহ অসুস্থ হলে বাইডেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্ষমতা নেয়ার ১৮ মাসের মাথায় এসে বাইডেন কেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক।

ক্ষমতা নেয়ার ১৮ মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এ সফর শুরু হয়েছে গত বুধবার। চার দিনের সফরে তিনি প্রথমে যান ইসরায়েলে। এরপর গেছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সৌদি আরবও সফর করেছেন বাইডেন।

শুরু থেকেই তার এই সফর নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছিল। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইডেন দূরত্ব বজায় রেখে ওইসব দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং হাতও মেলাবেন না।

তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের যেসব ছবি সামনে এসেছে তাতে হোয়াইট হাউসের এ বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। জেদ্দায় সৌদি যুবরাজের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় বাইডেনকে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে ছবিতে।

বাইডেনের এ সফর নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। তার দেশেরই অনেকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট তার নীতির সঙ্গে আপস করেছেন।

কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারদের অন্যতম রিয়াদ। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে-পরে বাইডেনের অঙ্গীকারের সঙ্গে তার এই সফরের কোনো সামঞ্জস্য নেই বলে মনে করছেন অনেকে।

ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে জো বাইডেন ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যা নিয়েও তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এর আগে ২০১৮ সালে তুরস্কের আঙ্কারায় ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পেছনে সৌদি যুবরাজের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র।

খাশোগজির হত্যার পর নির্বাচনি প্রচারে বাইডেন বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি সৌদি শাসকদের ‘একঘরে’ করে ছাড়বেন।

এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য সৌদি বাদশাহ অসুস্থ হলে বাইডেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ক্ষমতা নেয়ার ১৮ মাসের মাথায় এসে বাইডেন কেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

সফরের আগে মত বদলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বাইডেন। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধও লিখেছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের পাল্টা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের শক্ত অবস্থান প্রয়োজন। এ কারণে সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে। সৌদি আরব তেমনই একটি দেশ।’

এরপর শুক্রবার দুই নেতা বৈঠক করেন। তবে বৈঠকে বাইডেন ফের খাশোগজি হত্যার বিষয়টি তোলেন।

এ সময় সৌদি যুবরাজ পাল্টা ইস্যু হিসেবে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার বিষয়টি তুলে আনেন। এ হত্যার তদন্ত না করা এবং ইরাকের আবু গারেব কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ‘ভণ্ডামি’ করার অভিযোগ আনেন তিনি।

বাইডেন সৌদি আরবে যাওয়ার আগে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর সফর করেন।

সফরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত থামাতে দ্বিরাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নিজের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন। ইসরায়েলি নেতাদের একদিকে খুশি করেছেন তিনি, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের হতাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনার জন্য ফিলিস্তিন এখনও তৈরি নয়।

সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি শিহাবি বলেছেন, ‘বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্যই ছিল সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করা।

‘এটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু তেল নয়, এই সফরের পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। বাইডেন দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছেন, সৌদি আরব কেবল আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল নয়, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দেশগুলো অস্ত্র বিক্রি করে এবং ইরানের ওপর এদের প্রভাব রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। মোট কথা আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যে কিছু করতে চান, তবে আপনি সৌদি আরবকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৪০ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে পেট্রল, খাদ্য ও বাসা ভাড়া বেড়েছে। জুনে বেশি বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এটি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৮১ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।

বাইডেনের কাছে মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সামনে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের সরাসরি প্রভাবিত করছে।

তেল মজুতের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ সৌদি আরব। তেলের দাম সহনীয় থাকবে নাকি রেকর্ড মাত্রায় ছাড়িয়ে যাবে, তা দেশটি অনেকাংশেই নির্ধারণ করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে না পেরে শনিবার সৌদি আরবেই চলে গেলেন বাইডেন।

তার এই সফরের আরেক কারণ হতে পারে আগামী মাসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর (ওপেক) শীর্ষ সম্মেলন। ওপেকের নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। যেকোনো সংকটে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে দেশটির।

এই সম্মেলনে সুখবরের আশায় সৌদি আরব সফর করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিভাগের আরো খবর