বয়স ১১। লাহোরে একটি পরিবারে ছয় বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করত। ফ্রিজ থেকে না বলে খাবার নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে তারা। পেটানো হয় বেদম। নির্যাতনের একপর্যায়ে মারা যায় বড় ভাই। ছোট ভাইকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাটি এমন সময় ঘটে, যখন গোটা পাকিস্তান ঈদের ছুটি উদযাপনে ব্যস্ত। মর্মান্তিক ঘটনাটি পাকিস্তানে শিশুশ্রমের ব্যাপকতা এবং বর্বরতাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।
পুলিশ বলছে, শিশুদের একটি ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল। নিয়োগকর্তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধারালো জিনিস দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেছিল তাদের। পরিবারের অন্যান্য সদস্য এ দৃশ্য দেখছিল। মারধরের অভিযোগে তিন নিয়োগকর্তাকে আটক করা হয়েছে। পলাতক আছে দুজন।
মামলায় অভিযুক্ত তিন নিয়োগকর্তাকে পুলিশ আটক করেছে; দুজন এখনও পলাতক। ছবি: লাহোর ডিআইজি অপারেশন অফিস
পুলিশ কর্মকর্তা আমানুল্লাহ বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে সেখানে যাই। তারা জানায়, মারধরের আলামতসহ এক শিশুর মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন তাকে সেখানে নিয়ে এসেছিল।
‘ওই দুজন সন্দেহজনক আচরণ করছিল। এ কারণে আমরা তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর আমরা শিশুটির আহত ছোট ভাইকেও উদ্ধার করি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা স্বীকার করেছে যে ফ্রিজ থেকে খাবার খাওয়ার জন্য তাদের পেটানো হয়েছিল।
‘শিশুরা কয়েক মাস ধরে এই পরিবারের জন্য কাজ করছিল। প্রায়ই তুচ্ছ বিষয়ে তাদের মারধর করা হতো।’
আমানুল্লাহ বলেন, ‘তদন্তকারীরা শিশুদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাদের ফোন নম্বর বন্ধ ছিল।’
পাকিস্তানে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করা বেআইনি। তবে দেশে এখনও ব্যাপক শিশুশ্রম রয়েছে। স্থানীয় শিশু অধিকার অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো বলছে, পাকিস্তানে আনুমানিক ১ কোটি ২৫ লাখের বেশি শিশু কারখানা, কৃষি অথবা গৃহকর্মীর কাজ করে।
চলতি বছরের জুনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানায়, মহামারিতে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে শিশুশ্রম। এসব শিশু শ্রমিক প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিত যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
রাওয়ালপিন্ডিতে ২০২০ সালে আট বছরের শিশু গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়। শিশুটির অপরাধ, মালিকের মূল্যবান তোতাপাখি সে বিনা মূল্যে একজনকে দিয়ে দিয়েছিল।
শিশু অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, দরিদ্র বাবা-মা প্রায়শই তাদের সন্তানদের ধনীদের বাড়িতে থাকতে এবং কাজ করতে চাপ দিয়ে থাকে। মাসে তারা ২৫ থেকে ৭৫ রুপি বেতন পেয়ে থাকে।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ চাইল্ডের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর আখতার সৈয়দ বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অশিক্ষিত। সন্তানের অধিকার এবং গার্হস্থ্য শিশুশ্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে তারা অসচেতন। তবে যে ব্যক্তি শিশুদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যই এটি সম্পর্কে সচেতন।
‘তারা জানে এটা বেআইনি। তবে ন্যূনতম খরচে ২৪ ঘণ্টা কাজ করানোর লোভ তারা সামলাতে পারে না।’