শ্রীলঙ্কার পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এখনও তার পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গোতাবায়ার বুধবার দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কথা ছিল।
স্পিকারের বরাত দিয়ে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মালদ্বীপে অবস্থানরত গোতাবায়া এখন পর্যন্ত তার পদত্যাগপত্র পাঠাননি।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগপত্র তার কাছে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন স্পিকার।
তিনি বুধবার বলেছিলেন, তার সঙ্গে গোতাবায়ার টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার দেশ ছেড়ে গোতাবায়া মালদ্বীপে আশ্রয় নেন।
শ্রীলঙ্কা সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর গোতাবায়া তার পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন।
বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে শনিবার কলম্বোয় তার সরকারি বাসভবন থেকে পালান।
সোমবারই তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা যায়। জ্যেষ্ঠ এক সরকারি কর্মকর্তার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেছেন বলেও জানা যায়। এই কর্মকর্তার পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে বুধবার গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করার কথা ছিল।
যে পদত্যাগপত্রে গোতাবায়া স্বাক্ষর করেছেন তার তারিখ ১৩ জুলাই, বুধবার দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরপর মঙ্গলবার রাতে তিনি দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেশটির ইমিগ্রেশন অফিসারদের বাধায় তিনি যেতে পারেননি। আকাশপথে ব্যর্থ হয়ে তিনি নৌবাহিনীর জাহাজে শ্রীলঙ্কা ছাড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
গোতাবায়া দেশ ছাড়ার পরই ক্ষোভে ফেটে করেন বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে ৮২ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেশটির সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ ছাড়া দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোতেও কারফিউ বলবৎ থাকবে।
কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। একপর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো মাত্রা আরও তীব্র হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় মে মাসে পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
এই পর্যায়ে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন এক এমপি। অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।