জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলিতে নিহতের ঘটনায় তেতসুয়া ইয়ামাগামি নামের একজন সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারা শহরে শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হন। তবে এর আগেই ইয়ামাগামি ওয়াকামা শহরে আবেকে বিস্কোরণে হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে কঠোর নিরাপত্তার জন্য ইয়ামাগামির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
নারা শহরে শুক্রবার নির্বাচনি প্রচারসভায় বক্তব্য দেয়ার সময় আবেকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। গুলি করার আগ মুহূর্তে ৪১ বছর বয়সী ইয়ামাগামি ঠিক আবের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন বলে ছবিতে দেখা গেছে।
জাপান পুলিশের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়ামাগামি তদন্তকারীদের বলেছেন যে তিনি প্রাথমিকভাবে ওকায়ামাতে একটি অনুষ্ঠানে বিস্ফোরক ব্যবহার করে আবেকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।
ওয়াকামা শহরটি নারা শহর থেকে তিন ঘণ্টার পথ।
ইয়ামাগামিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচ জানিয়েছে, ‘আমি সেখানে (ওকায়ামা) সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি দেখেছি যে প্রবেশপথে সবার নাম-ঠিকানা লিখতে হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিলাম সেখানে প্রবেশ করা কঠিন হবে।’
জাপান মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা ইয়ামাগামি। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর ওই পদে ছিলেন।
ঘটনার তদন্তকারীদের কাছে ইয়ামাগামি জানিয়েছেন, শিনজো আবের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল তার। এ জন্য হাতে তৈরি বন্দুক নিয়ে আবেকে গুলি করেন তিনি।
আবের নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিলগুলিতে নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল বলে স্বীকার করেছে জাপান পুলিশ।
শিনজো আবের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়তে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জাপানে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ জাপানে বন্দুক নিয়ে হামলার ঘটনা খুব বিরল। দেশটিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথাও খুব একটা শোনা যায় না।
জাপানে নির্বাচনি প্রচারণায় রাজনীতিবিদরা সাধারণত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন, মানুষের সঙ্গে হাত মেলান। এ কারণেই আবের হামলাকারী তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
দেশটিতে গোলাগুলির হার বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর কারণ দেশটির কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন। এরপরও এমন হত্যাকাণ্ডে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্ববাসী।
নারার পুলিশপ্রধান তোমোয়াকি ওনিজুকা বলেন, ‘নিরাপত্তায় যে সমস্যা ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না।’
জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অফ কাউন্সিলরসের নির্বাচন সামনে রেখে শুক্রবার প্রচারাভিযানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আবে। ইয়ামাতো সাইদাইজি স্টেশনের সামনে বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পুলিশ এর পরই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে।
৬৭ বছর বয়সী হাসপাতালে মারা যাওয়া আবে দীর্ঘ সময় ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতিতে বড় প্রভাব ছিল আবের। এই দলের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিনজো আবে ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। ২০০৬ সালে তিনি প্রথবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১২ সালে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। তার বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া তার এক দাদা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।