জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মরদেহবাহী গাড়িকে একনজর দেখতে তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছে শত শত মানুষ।
এ সময় উপস্থিত জাপানিরা সিএনএনকে বলেছে, তারা আবের হত্যাকাণ্ড বিশ্বাস করতে পারছে না এবং প্রাক্তন নেতার মৃত্যুতে তারা কষ্ট পেয়েছে।
শিনজো আবেকে একনজর দেখতে তার বাড়ির কাছে অবস্থান নেয়া ১৮ বছর বয়সী রিয়োগো উটো বলেন, ‘আবে একজন সম্মানিত নেতা ছিলেন, যিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন জাপানের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’
তনিমুরা নামের আরেকজন, যিনি শুরুতে সিএনএনের কাছে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। প্রায়ই তিনি আবেকে এই এলাকায় দেখেছেন এবং শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন। যদিও তিনি আবের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সব বিষয়ে একমত নন।
জাপানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো শুক্রবার শিনজো আবের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবরটি জানায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে
নারা শহরে নির্বাচনি প্রচার সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হন শিনজো আবে। একে গুপ্তহত্যার চেষ্টা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার পর পর অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। তার বুক থেকে রক্ত ঝরছিল।
আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অফ কাউন্সিলরসের নির্বাচন সামনে রেখে দেশটিতে চলছে প্রচার। সে প্রচারের অংশ হিসেবে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইয়ামাতো সাইদাইজি স্টেশনের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আবে। সে সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
পুলিশ এরই মধ্যে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ৪১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি তেতসুয়া ইয়ামাগামি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচকে।
ঘটনাস্থলের ভিডিওতে দেখা যায়, আবেকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়া হয়।
জাপানের অগ্নি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, একটি গুলি আবের ঘাড়ের ডান পাশে লাগে। তার বুকের বাম পাশে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে।
সন্দেহভাজন হামলাকারী জাপান মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর ওই পদে ছিলেন।
ঘটনার তদন্তকারীদের কাছে ইয়ামাগামি জানিয়েছেন, শিনজো আবের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল তার।
শিনজো আবের বাড়ির সামনে প্রহরারত পুলিশ
২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে বড় প্রভাব ছিল আবের। এই দলের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিনজো আবে ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। ২০০৬ সালে তিনি প্রথবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১২ সালে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। তার বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া তার এক দাদা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
জাপানে বন্দুক হামলা খুবই বিরল ঘটনা। কারণ সেখানে অস্ত্র বহন করা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া জাপানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের টার্গেট করে হত্যা করার ঘটনাও খুব একটা দেখা যায় না।
২০০৭ সালে নাগাসাকি শহরের মেয়র ইচো ইতোকে গুলি করে হত্যা করেছিল গ্যাংস্টাররা। ১৯৬০ সালে জাপানের সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধানকে বক্তব্য দেবার সময় গুলি ছুড়ে হত্যা করে ডানপন্থিরা।