তালেবানের নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল সফর করেছেন। গত আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে চলে আসার পর এটাই তার প্রথম কাবুল সফর।
তালেবান কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মোল্লা হাইবাতুল্লাহ ‘জাতীয় ঐক্যের’ বিষয়ে আলোচনার জন্য কমপক্ষে ৩ হাজার ধর্মীয় পণ্ডিতদের সামনে ভাষণ দিয়েছেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে কোনো স্বাধীন সাংবাদিককে আসতে দেয়া হয়নি।
বক্তব্যের অডিও সম্প্রচার
মোল্লা হাইবতুল্লাহর কোনো ভিডিও বা ছবি প্রকাশ করা হয়নি। তবে তার উপস্থিতি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরে উল্লাস শোনা যায়।
গুঞ্জন আছে, মোল্লা হাইবাতুল্লাহ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন। যদিও একাধিক সূত্র বিবিসিকে হাইবাতুল্লাহর জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বক্তৃতায় হাইবাতুল্লাহ তালেবানের আফগানিস্তান দখলের প্রশংসা করেছিলেন। তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘এ ঘটনা কেবল আফগানদের জন্য নয়, বিশ্বের সব মুসলমানদের জন্য গর্বের বিষয় এটি।’
নারীর প্রতি তালেবানের আচরণের অব্যাহত আন্তর্জাতিক সমালোচনা মোকাবিলার কথাও জানান হাইবাতুল্লাহ। জনসমক্ষে সম্প্রতি নারীদের আগাগোড়া পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান সরকার।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমরা এখন একটি স্বাধীন দেশ। বিদেশিদের আমাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ কড়া উচিত না। এটি আমাদের ব্যবস্থাপনা। আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত রয়েছে।
‘এক আল্লাহর প্রতি আমাদের ভক্তি আছে। আমরা অন্যের আদেশ মেনে নিতে পারি না। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না।’
সমাবেশে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়নি। দেশের অধিকাংশ জায়গায় মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার। সমাবেশে কোনো নারীকে আসতে দেয়া হয়নি।
জ্যেষ্ঠ এক তালেবান নেতা বলেন, ‘নারীরা আমাদের মা, বোন। আমরা তাদের অনেক সম্মান করি। যখন তাদের ছেলেরা সমাবেশে থাকে তার মানে তারাও এখানে আছেন।’
তবে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না আফগান নারী অধিকার কর্মীরা। ক্ষোভ ও হতাশার সঙ্গে তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
দক্ষিণ হেলমান্দ প্রদেশের একজন বলেন, ‘তারা (তালেবান) কেবল মানুষের মুখ বন্ধ করার জন্য জড়ো হয়েছিল।’
আফগান নারীবাদী এবং রাজনীতিবিদ মুনাসা মুবারেজ বলেন, ‘এই সমাবেশ বৈধ না। কেউ এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেবে না। আসলে আফগান ও তালেবানের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কি একবারও মানুষকে জিজ্ঞাসা করেছে কেন তারা অর্থের জন্য অনাহারে থাকে, তাদের শরীরের অঙ্গ বা সন্তান বিক্রি করে?
‘তারা নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। তালেবান সার্কেলে নারীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। বিশ্ব এখন এটি জানে। আমি আশা করি, বিশ্ব আমাদের সাহায্য করবে।’
কাবুলের বাসিন্দা বারানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার। তিনি বলেন, ‘এটি সমমনা লোকদের একটি সমাবেশ ছিল। এটি আমার কথা নয়… এটা সবাই মনে করে এবং বলে।
‘একজন নারী হিসেবে আমি খুবই হতাশ। তারা আমাদের মানুষ হিসেবে মূল্য দেয় না। গত কয়েক মাস ধরে আফগান নারীরা এক মিনিটেরও সুখ পায়নি। সরকার, সমাজ এমনকি আমাদের পরিবার দ্বারা দমন করা হচ্ছে। আমি বিশ্বের কাছে তালেবানের উপজাতীয় সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
গত বছর তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদেশী উন্নয়ন সহায়তা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় গভীর অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটে রয়েছে আফগানিস্তান। জাতিসংঘ এবং দাতব্য সংস্থাগুলো যদিও স্বল্পমেয়াদী মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে, তবে তা পর্যাপ্ত না।