বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নাপাম বালিকা’ নাম ঘোচালেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই শিশু

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২২ ১১:১০

ঘটনার সময় নাপাম বালিকা কিম ফুকের ক্ষতগুলো এতই গুরুতর ছিল যে আক্রমণের পরপরই চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন তিনি বেঁচে থাকবেন না। ১ বছরেরও বেশি সময় চিকিৎসা নেয়ার পরে তার অবস্থা স্থিতিশীল হয় এবং ভিয়েতনামেই বসবাস করতে থাকেন। এবার চূড়ান্ত চিকিৎসায় তার শরীর থেকে পুরোপুরি বিদায় নিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি।

যে বালিকার পোড়া ও বেদনায় চিৎকার করতে করতে দৌড়ে আসা ছবি ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই ঘটনার ৫০ বছর পরে এবার সেই শিশুর জীবন চিরতরে বদলে গেল।

১৯৭২ সালে এক ফটো সাংবাদিকের তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, ভিয়েতনামের ত্রাঙ্গ ব্যাঙ গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছে ৯ বছরের এক কন্যাশিশু, তার শরীরে ফুসকুড়ি দেখা যাচ্ছে, পুড়ে গেছে জামাকাপড়। আর এই পুরো ঘটনাটাই ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাপাম বোমা নিক্ষেপের ফলে। ঘটনার পরদিনই এই ছবি জায়গা করে নেয় নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রচ্ছদে।

ছবিটির জন্য ১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটো সাংবাদিক নিক উট। এর মধ্য দিয়ে শিশু কিমের কথা সামনে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারা বিশ্বে। ওয়াশিংটনের ভিয়েতনাম নীতির বিরুদ্ধে সড়কে নামেন যুক্তরাষ্ট্রের হাজারও নাগরিক।

সেই মুহূর্তে আমি কী ভেবেছিলাম, আমার মনে আছে। আমি ভাবছিলাম, আমি পুড়ে যাচ্ছি, আমি কুৎসিত হব, তারপর লোকেরা আমাকে অন্য চোখে দেখবে।

সে সময় এই ছবির কারণে ৯ বছর বয়সী এই শিশু কিম ফুককে নাপাম বালিকা বলে ডাকা হতো।

স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ বছরে এসে তিনি এখন ৫৯ বছর বয়সী নারী ফান থি। এবার তিনি তার নাপাম বালিকা নাম ঘুচিয়ে ফেলেছেন। নাপাম বোমার কারণে ৫০ বছর ধরে বয়ে চলা ঘাড়ের ব্যথা ও দাগের অবশেষে চূড়ান্ত চিকিৎসা তিনি পেয়েছেন। ফলে তার শরীর থেকে মুছে গেছে নাপাম বোমার সেই ভয়ংকর স্মৃতি।

তবে ঘটনার সময় তার ক্ষতগুলো এতই গুরুতর ছিল যে আক্রমণের পরপরই চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন তিনি বেঁচে থাকবেন না। ১ বছরেরও বেশি সময় চিকিৎসা নেয়ার পরে তার অবস্থা স্থিতিশীল হয় এবং ভিয়েতনামেই বসবাস করতে থাকেন। ১৯৯২ সালে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কানাডায় থিতু হন।

কিন্তু তার ব্যথা পিছু ছাড়ে না এবং বেশ কয়েক বছর আগে মিয়ামিতে ডা. জিল জাওয়াইবেলের অধীনে তার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ডা. জিল তার চিকিৎসা বিনা মূল্যে করতে রাজি হন।

চিকিৎসার পর পূর্ণ সুস্থ ফান থি বলেন, ‘এখন ৫০ বছর পরে আমি আর যুদ্ধের শিকার নই, আমি নাপাম বালিকা নই, এখন আমি একজন বন্ধু, একজন সাহায্যকারী, আমি একজন দাদি এবং আমি শান্তির জন্য আহ্বান জানানো বেঁচে থাকা একজন মানুষ।’

৫০ বছর আগে সেদিনের কথা স্মরণ করে ফান থি বলেন, আমি ওপরে তাকালাম, বিমান ও চারটি বোমা দেখতে পেলাম।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বদলে দেয়া এপির সাংবাদিক নিক উটের তোলা সেই ছবি

তিনি জানান, তখন তিনি শিশুদের সঙ্গে খেলছিলেন, ভিয়েতনামি সেনারা তাদের দৌড়াতে বলেছিল। ফান থি বলেন, আমি ওপরে তাকাই এবং বোমাগুলোকে পড়তে দেখি।

তখন তিনি খুব গরম, খুব গরম বলে দৌড়াতে থাকেন।

তিনি বলেন, সেই মুহূর্তে আমি কী ভেবেছিলাম, আমার মনে আছে। আমি ভাবছিলাম, আমি পুড়ে যাচ্ছি, আমি কুৎসিত হব, তারপর লোকেরা আমাকে অন্য চোখে দেখবে।

পরের দিন নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠায় উটের তোলা ছবি ছাপা হয়। তিনি এখনও ফান থি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

সে সময় শিশু ফান থির চিকিৎসাও ডাক্তাররা শুরু করেছিল উটের জোরাজুরিতে আর এবার ৫০ বছর পর সর্বশেষ চিকিৎসার সময়ও ফান থির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উট।

বর্তমানে উটের বয়স ৭১ বছর। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন মাত্র ২২ বছরের যুবক।

এ বিভাগের আরো খবর