রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেন যদি পূর্ণাঙ্গ ন্যাটো সদস্য হয়ে ক্রিমিয়া আক্রমণ করে, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্গিমেন্টি আই ফ্যাকটি পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে মেদভেদেভ বলেন, ‘আমাদের জন্য ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ এবং এটি চিরকাল থাকবে। ক্রিমিয়ার ওপর আক্রমণের যেকোনো প্রচেষ্টা আমাদের জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো। যদি কোনো ন্যাটো সদস্য তা করে, তাহলে এর অর্থ হবে সমগ্র উত্তর আটলান্টিক জোটের সঙ্গে সংঘর্ষ। অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা পুরোপুরি বিপর্যয়।’
২০১৪ সালে ইউক্রেনে এক অভ্যুত্থানে মস্কোপন্থি সরকারের পতন হলে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। পরে এক গণভোটে ক্রিমিয়ার জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে যোগদানের পক্ষে ভোট দেয়। ক্রিমিয়াতে মূলত রুশভাষীদেরই বসবাস।
যদিও ইউক্রেন এই গণভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়া-দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে।
সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাদের ভারী অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে শর্ত এই যে এসব ভারী অস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে আঘাত করা যাবে না। শুধু ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ করা রুশ সেনাদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে।
ইউক্রেন দাবি করে আসছে, ক্রিমিয়া হলো রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল। রুশ ভূখণ্ডে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ, যিনি বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সেই দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ এমনকি এর কোনো সম্ভাব্য কারণও নেই, আমরা এমনটা আশাও করি না। ন্যাটোতে যোগ দিয়ে যদি তারা আরও ভালো ও নিরাপদ বোধ করে তবে তারা ন্যাটোতে থাকুক। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ছাড়াও ন্যাটো আমাদের পাশেই রয়েছে।’
তবে নরডিক দেশগুলোর ন্যাটোতে যোগদানের ফলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে এমনটা জানিয়ে মেদভেদেভ বলেন, দুই ন্যাটো প্রার্থী দেশের নাগরিকদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রধারী যুদ্ধজাহাজের দোরগোড়ায় বসবাস করা রোমাঞ্চিত হওয়ার মতো কিছু নয়।
এ ছাড়া মেদভেদেভের মতে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সামরিক গঠনে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে, যা দুই দেশই নিজেদের বেসামরিক প্রকল্পে ব্যয় করতে পারত।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুরুতে তুরস্ক দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করলেও পরে তার অবস্থান থেকে সরে আসে।
এদিকে ন্যাটো সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, এবারের সংঘাত শেষ হলে আমাদের অবশ্যই পশ্চিমা নিরাপত্তাবলয়ে একটি স্থান দিতে হবে। আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দরকার এবং আপনাদের অবশ্যই ইউক্রেনের জন্য একটি সাধারণ নিরাপত্তার জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।